Type Here to Get Search Results !

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২ | দশম শ্রেণী বাংলা কবিতা তৃতীয় অধ্যায় সাজেশন ২০২২



আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা শঙ্খ ঘোষ|দশম শ্রেণী বাংলা তৃতীয় অধ্যায় | mcq প্রশ্ন ও উত্তর |বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায় বাংলা সাজেশন ২০২২ |মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায়


১. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি কবির কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? 

ক) 'নিহিত পাতাল ছায়া'

খ) 'পাঁজরে দাড়ের শব্দ' 

গ) 'দিনগুলি রাতগুলি' 

ঘ) 'জলই পাষাণ হয়ে আছে'

২. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়

ক) ২০০২ খ্রিস্টাব্দে 

খ) ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে 

গ) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে

ঘ) ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে 

৩. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা 

ক) ১৮টি 

খ) ২৫টি 

গ) ৩১টি 

ঘ) ৩৫টি

৪. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থের

(ক) ১ সংখ্যক কবিতা 

খ) ১০ সংখ্যক কবিতা 

গ) ২৫ সংখ্যক কবিতা 

ঘ) ৩১ সংখ্যক কবিতা

৫. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটির রচনাকাল- 

ক) ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ 

খ) ২০০৪-২০০৬ খ্রিস্টাব্দ 

গ) ২০০৭-০৮ খ্রিস্টাব্দ 

ঘ) ২০০০-০৩ খ্রিস্টাব্দ

৬. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটি কবি শঙ্খ ঘোষ যাঁদের উৎসর্গ করেন, তাঁরা হলেন-- 

ক) জয়দের আর সেবন্তী

খ) অভীক আর মালা 

গ) অরিজিৎ আর রীণা 

ঘ) শ্রীজাত আর দুর্বা

৭. আমাদের ডান পাশে

ক) খাদ 

খ) ধ্বস 

গ) প্রান্তর 

ঘ) বন

৮. 'আমাদের বাঁয়ে রয়েছে- 

ক) গিরিখাত 

খ) বোমারু বিমান 

গ) পর্বত 

ঘ) অরণা 

 

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা শঙ্খ ঘোষ|দশম শ্রেণী বাংলা তৃতীয় অধ্যায় | Saq প্রশ্ন ও উত্তর |সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর |অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায় বাংলা সাজেশন ২০২২ 


1. কবি শঙ্খ ঘোষ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ?

উত্তর : কবি শঙ্খ ঘোষ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন ।

2. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের কোন কাব্যগ্রন্থের কবিতা?

উত্তর : কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের জলই পাষান হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থের কবিতা ।

3. কবিতার কথকের ডান পাশে কিসের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে?

উত্তর : আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার কঠকের ডান পাশে ধসের চিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে

4. আমাদের পথ নেই কোন এরকম মন্তব্যের কারণ কি?

উত্তর : সম্পূর্ণ প্রতিকূল ও অস্থির পরিবেশে এ কথা মনে হয়েছে যে আমাদের কোন পথ নেই। কেননা যে কোন দিকে পা বাড়ালে চূড়ান্ত অঘটন ঘটবে।

5. আমাদের ঘর গেছে উড়ে কথাটির অর্থ পরিপুষ্ট কর?

উত্তর : শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি স্বার্থের জন্য দুর্বল দেশগুলির উপর বোমারু বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করেছে। সে কারণে আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ঘর উড়ে গেছে ।

6. ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে? কি ছড়ানো রয়েছে?

উত্তর : শঙ্খ ঘোষ রচিত আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি, কবিতায় কতকে বিবৃতি অনুযায়ী কাছে দূরে মানব শিশুর মৃত্যু দেহ ছড়ানো রয়েছে ।

7. আমাদের পথ নেই আর / পথ শব্দটির উদ্দ্রিত অংশে কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তর : আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা থেকে নেওয়া ওপরের আলোচন সে পথ শব্দটি উপায় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।


আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা শঙ্খ ঘোষ|দশম শ্রেণী বাংলা তৃতীয় অধ্যায় | রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর |বড়ো প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় অধ্যায় বাংলা সাজেশন ২০২২ 


প্রশ্ন : আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ ”— গিরিখাদ' কী? এই উল্লেখের কারণ আলোচনা করো।

উত্তর : গিরিখাদ : দুটি পর্বতের মধ্যভাগের সরু নীচু জায়গা যা পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বাস্তবে তা অতি বিপজ্জনক।

উত্তর : গিরিখাদ'-এর উল্লেখের কারণ: বর্তমানে সাধারণ মানুষ এক সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতে প্রতি পদক্ষেপে রয়েছে বিপদের সম্ভাবনা। বায়ে গিরিখান" আপাতভাবে পথের দুর্গম চরিত্রকে বোঝায়। সেই পথে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর সম্ভাবনা। কিন্তু বাস্তবে তা সভ্যতার সংকটকেই বোঝায়। গিরিখান'-এর উল্লেখ করা হয়েছে এই বিপদের প্রতীক হিসেবেই।

প্রশ্ন : আমাদের মাথায় বোমারু ”— বোমারু কী? মন্তব্যটির অর্ধ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : বোমারুর অর্থ: 'বোমারু' কথাটির অর্থ যুদ্ধবিমান।

উত্তর : অর্থ বিশ্লেষণ: পৃথিবীজুড়ে যুদ্ধের বীভৎসতা আর হিংস্র উন্মত্ততা লক্ষ করেছেন কবি। এতে একদিকে সমাজজীবনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে উঠেছে। যুদ্ধবিমান সেই বিপন্নতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই 'বোমারু' হল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতীক। মাথার উপরে তার আনাগোনা প্রতিমূহূর্তে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা তৈরি করে। কারণ যুদ্ধ মানেই মানুষের মৃত্যু এবং আশ্রয়হীনতা।

প্রশ্ন : আমাদের পথ নেই কোনো” – এই পথ না থাকার তাৎপর্য কী?

উত্তর :  উৎস: উদ্ধৃত অংশটি শঙ্খ ঘোষের লেখা আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতা থেকে গৃহীত। তাৎপর্য: বর্তমানে হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ ক্রমশ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতা তাকে কোথাও স্থির থাকতে দিচ্ছে না। আদর্শবোধের ভাঙন ক্রমশই এত তীব্রতর হচ্ছে যে মানুষের চেতনা কোন্ পথে যাবে তা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডান দিকে ধ্বংসের তাণ্ডব, বাম দিকেও মৃত্যুফাঁদ। এরই পাশাপাশি মাথার ওপরে বোমারু বিমানের হানা আর চলতে গেলে পায়ে পায়ে প্রতিবন্ধকতা। এভাবেই মানুষের কাছে চলার পথ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অন্ধকার এবং আদর্শহীনতা গ্রাস করছে আমাদেরকে।

প্রশ্ন : আমাদের ঘর গেছে উড়ে।”—কাদের ঘর, কেন উড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন কবি?

উত্তর : উদ্দিষ্ট: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় আমাদের অর্থাৎ নিরীহ সাধারণ মানুষের ঘরের কথা বলা হয়েছে।

উত্তর : ঘর উড়ে যাওয়ার কারণ : বর্তমান বিশ্বে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির দ্বারা এ দুর্বল রাষ্ট্রগুলি আক্রান্ত হচ্ছে। বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে সেইসব দুর্বল রাষ্ট্রগুলির ওপর। এরফলে নিরস্ত্র, শান্তিপ্রিয় মানুষদের ঘর উড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবাজ দেশগুলি বিমান নিয়ে হানা দিচ্ছে। যেখানে সেখানে বোমাবর্ষণ করছে সেই ‘বোমারু বিমান’। এর ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ, আলোচ্য অংশে কবি এই আশ্রয়হীনতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

প্রশ্ন : আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।” মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : পৃথিবীজোড়া অনিশ্চয়তা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, ধর্মান্ধতা, রাজনৈতিক আদর্শহীনতা ইত্যাদি সমাজকে অস্থির করে তুলছে। পৃথিবীজুড়ে যেন ধ্বংসলীলা চলছে। আর যে-কোনো যুদ্ধ অথবা সন্ত্রাসে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটে যথেষ্টই। এই নারকীয় দৃশ্য কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যে ঘটে তা নয়, ঘটতে পারে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তেই। এ শুধু অমানবিকতার প্রকাশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিনাশ। একই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কবি এই ধ্বংসলীলায় উদাসীন থাকতে পারেননি।

প্রশ্ন : আমরাও তবে এইভাবে / এ মুহূর্তে মরে যাব না কি? এখানে 'আমরা' কারা ? এই সংশয়ের কারণ কী?

উত্তর : আমরা'-র পরিচয়: এখানে 'আমরা' বলতে কবি সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন।

উত্তর : সংশয়ের কারণ: যুদ্ধে উন্মত্ত পৃথিবীতে অনবরত চলে বোমাবর্ষণ, গোলাগুলি, রক্তপাত। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরীহ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। মাথার উপরে বোমারু বিমান, চলার পথে অজস্র প্রতিকূলতা।

যুদ্ধের অন্তরে চলার পথ নেই, মানুষ আশ্রয়হীন । যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয় ডেকে আনে মৃত্যু কেউ । বিস্তীর্ণ প্রান্তজুড়ে পড়ে থাকে শিশুদের মৃতদেহ। আর মৃত্যু ভয় তারা করে সকল মানুষকে। এ কারণে কবির মনে সংশয় দেখা গিয়েছে। 

প্রশ্ন : আমাদের ইতিহাস নেই”–কে, কেন এ কথা বলেছে?

উত্তর : উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: কবি শঙ্খ ঘোষ স্বয়ং সাধারণ মানুষের হয়ে কথাটি বলেছেন। এ কথা বলার কারণ : ইতিহাস আসলে জাতির আত্মবিকাশের গৌরবময় কাহিনি, তার ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। কিন্তু যখন সেই ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতির দ্বারা, তখন ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে। ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে। মানুষ একসময় ভুলে যায় তার প্রকৃত ইতিহাস, আর চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকেই নিজের বলে মেনে নেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতকে তুলে ধরতে গিয়েই কবি এ কথা বলেছেন।


প্রশ্ন : আমাদের চোখমুখ ঢাকা/ আমরা ভিখারি বারোমাস”— ‘ভিখারি' শব্দটির তাৎপর্য স্পষ্ট করো।

উত্তর : প্রসঙ্গ : কবি আমাদের ইতিহাস প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন। 

তাৎপর্য: ক্ষমতাবান শাসকরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে এমনভাবে রচনা করতে চায়, যেন তা শুধু তাদেরই। আর সাধারণ মানুষ অসহায়ের মতো সেই ইতিহাসকেই নিজেদের ইতিহাস বলে মেনে নেয়। তৈরি হয়। বঞ্চনার ইতিহাস। মানুষ ‘ভিখারি' হয়ে থাকে ইতিহাসহীনতার কারণে। এই হীন কাজের দ্বারা জীবিকানির্বাহকে কটাক্ষ করেই কবি উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

প্রশ্ন : পৃথিবী হয়তো গেছে মরে—কবি কেন এ কথা বলেছেন ? 

উত্তর : শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবি তার চারপাশের সমাজে, অস্থিরতা ও ধ্বংসের ছবি প্রত্যক্ষ করেছেন। সেখানে চলার পথে প্রতিমুহূর্তে বাধা, মাথার উপরে বোমারু বিমানের আনাগোনা । যুদ্ধের তাণ্ডবে মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আবার ক্ষমতাবানদের শাসনে মানুষদের অধিকারের কোনো স্বীকৃতি নেই। অন্যের অনুগ্রহে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। মনুষ্যত্বের এই বিপর্যয় ঘটার পরেও পৃথিবীর টিকে থাকা সম্ভব কিনা তা নিয়ে কবির মনে সংশয়  জেগেছে। 

প্রশ্ন : আমাদের কথা কে-বা জানে।”— এই মন্তব্যের দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন লেখো।

উত্তর: ক্ষমতাবানদের নিয়ন্ত্রণ: আজকের পৃথিবী পরিচালিত হয়। ক্ষমতাবান শাসকদের দ্বারা। ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুধু ক্ষমতাশালীরাই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা সাধারণ মানুষ সেখানে থাকে উপেক্ষিত। দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ানোটাই তার নিয়তি। অর্থাৎ অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকা ছাড়া তার অন্য কোনো গতি নেই। এই মানুষেরা হয়তো দক্ষতা কিংবা প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত মূল্য পায় না। অন্যের করুণা বা দয়ার ওপরেই তাদের নির্ভর করে থাকতে হয়।


প্রশ্ন : আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।”— 'আমরা' কারা? তাদের সম্পর্কে এ কথা বলার কারণ কী?

উত্তর :  আমাদের পরিচয়। উল্লিখিত অংশে 'আমরা' বলতে সাধারণ মানুষদের বোঝানো হয়েছে।

উত্তর : এ কথা বলার কারণ সমাজব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ উপেক্ষিত। সব কিছুই পরিচালিত হয় ক্ষমতাবানদের ইচ্ছায়। তারাই ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করে। 'চোখ মুখ ঢাকা' অবস্থায় অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ মানুষদের বাঁচতে হয়। তারা বেঁচে থাকে প্রভাবশালীদের দয়া নিয়ে। অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের নিয়তি। সমাজে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠাহীন সাধারণ মানুষ তাই ক্ষমতাবানদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ায়।  

প্রশ্ন : আমাদের ডান পাশে ধ্বস/আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ” সমগ্র কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্যের তাৎপর্য লেখো।

উত্তর : উৎস: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষের বিপন্ন অবস্থাকে ছোঁয়ার চেষ্টা। প্রসঙ্গ: বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অনেকগুলি সংকট। একুশ শতকের শুরু থেকেই পৃথিবীজুড়ে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গেই কবি আলোচ্য উদ্ধৃতিটির উল্লেখ করেছেন। তাৎপর্য: সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা নির্বিচারে আক্রান্ত হয়েছে একের পর এক দেশ। মানুষের বর্বরতা, ধর্মান্ধতা ‘হিমানীর বাঁধ'-এর মতো চলার পথকে বন্ধ করে দিচ্ছে। ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে মৃত্যু আর রক্তাক্ততায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। সাধারণ মানুষ আশঙ্কায় ভুগছে—“আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?” এই অবস্থায় প্রয়োজন ছিল আদর্শবোধের প্রতিষ্ঠা, যা পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারত আমাদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানেও কোনো সম্ভাবনা কবি দেখতে পাচ্ছেন না। ‘ডান পাশ' এবং বাঁ-দিক অর্থাৎ সর্বত্রই ধ্বংস এবং মৃত্যুর হাতছানি। ‘সম্পর্কের উৎসব' নামক গদ্যরচনায় কবি লিখেছিলেন—“নতুন শতাব্দীর মানুষকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে তার আয়োজন। ... যেখানে এক সম্প্রদায়ের মানুষ আর অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু মানুষ পরিচয়েই মেলাতে পারেন হাত....।” কিন্তু দিশাহীন চারপাশে কবি সেই আদর্শের আলো খুঁজে পাচ্ছেন না, যা পথ দেখাতে পারে। প্রশ্ন


প্রশ্ন  : আমাদের পথ নেই আর”— 'আমরা' কারা? পথ নেই কেন ? পথহীন মানুষগুলোর কর্তব্য কী ?

উত্তর : ‘আমরা'-র পরিচয়: 'আমরা' বলতে সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে।

→ পথ না থাকার কারণ: “পক্তি ১-১২”-এর অংশের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত ৩নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

পথহীন মানুষের কর্তব্য: পথহীন মানুষদের সামনে বেঁচে থাকার তীব্র সংকট। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর তীব্র আশঙ্কা। এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে হবে। 

এর জন্য পরস্পরের হাতে হাত রেখে চলতে হবে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য এই একতাই হল একমাত্র শক্তি ।

প্রশ্ন : “আমাদের শিশুদের শব— / ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।”—কোন্ পরিস্থিতিতে কবি “শিশুদের শব’ দেখেছেন? এই ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ কেন?

উত্তর :  পরিস্থিতি: শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় সময় এবং সমাজের নানারকম অস্থিরতাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। চারপাশে শুধু ধ্বংসের আয়োজন। ডানপাশে ধ্বস' আর 'বাঁয়ে গিরিখাদ’ যেন বিপদের প্রতীক। মাথায় বোমারু বিমানের আনাগোনা যুদ্ধের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করে। আর যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর মৃত্যু। যার পরিণতিতে মানুষের চলার পথ ধ্বংস হয়, মানুষ নিরাশ্রয় হয়। আর এই ধ্বংস উন্মত্ততাই শিশুদের মৃত্যু ঘটায়। ‘কাছে দূরে' অর্থাৎ বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে পড়ে থাকে শিশুদের মৃতদেহ।

ঘটনাটির তাৎপর্য: শিশুদের মৃত্যু সভ্যতার জন্য সর্বনাশের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। যুদ্ধ কত নিষ্ঠুরতা নিয়ে আসে এই ঘটনা তার প্রতীক। শিশুদের মৃত্যু সাধারণ মৃত্যুর থেকে আলাদা। কারণ, শিশুরা ভবিষ্যতের সমাজ গঠনের কারিগর। তাদের মৃত্যু ঘটার অর্থই হল সভ্যতার ভবিষ্যতে শূন্যতা সৃষ্টি হওয়া। দ্বিতীয়ত, শিশুদের মৃত্যু সমাজের বাকি অংশের মানুষদেরও মৃত্যু ভয়ে শঙ্কিত করে তোলে। “—আমরাও তবে এইভাবে/এ মুহূর্তে মরে যাব না কি?” ‘কাছে দূরে' ‘শিশুদের শব’ সাধারণ মানুষকে নিজেদের বিষয়ে ভীত করে তোলে। তারা বিপন্নবোধ করে, আর তার মূলে থাকে শিশুদের মৃত্যু।


প্রশ্ন : “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি” এমনটা মনে হচ্ছে কেন ?

উত্তর : শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় সমাজ সভ্যতার অস্থির স্বরূপকে তুলে ধরেছেন। যুদ্ধ, ভেদবুদ্ধি, আদর্শহীনতা ইত্যাদি সভ্যতার গতিপথকে রুদ্ধ করে তুলেছে। ‘ডান পাশে ধ্বস' আর ‘বাঁয়ে গিরিখাদ’ চলার পথকে করেছে বিপৎসংকুল। মাথার উপরে যুদ্ধবিমান ধ্বংস ও মৃত্যুর ছায়াকে দীর্ঘতর করে তুলেছে। বরফ যেমন চলার পথকে দুর্গম করে তোলে সেভাবেই যুদ্ধ, আদর্শের অভাব, স্বার্থপরতা ইত্যাদি এগিয়ে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের তাণ্ডবে মানুষ নিরাশ্রয় হয়। বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে—" আমাদের ঘর গেছে উড়ে/আমাদের শিশুদের শব ___ /ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে ।" ধ্বংসের এই প্রচন্ড তার শিহরিত করে সাধারণ মানুষদেরকেও। সর্বনাশের আশঙ্কা সংক্রমিত হয়। জীবনের অগ্রগতি শুধু অবরুদ্ধ হয় না। তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। মৃত্যু ভয় ছুয়ে যায় সকলকে। আশঙ্কি তো মানুষদের তখনই মনে হয় __ " আমরাও তবে এইভাবে/এই মুহূর্তে মরে যাব নাকি? 


প্রশ্ন : আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”—কবির এই আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।

উত্তর অস্থির সংকটকালের ছবি: শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় অস্থির সময়ে মানুষের সংকটের ছবিকে তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক আদর্শহীনতা যেমন মানুষকে ঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে তেমনই সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সমাজকে রক্তাক্ত করছে। অস্তিত্বের সংকটে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। “আমাদের পথ নেই কোনো/আমাদের ঘর গেছে উড়ে/আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!” প্রকৃত ইতিহাসহীনতা: এই সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রেরণা সংগ্রহ করার মতো কোনো ইতিহাসও আমাদের নেই। কারণ ক্ষমতাবান শাসকেরা যে ইতিহাস আমাদের উপহার দিয়েছে তা বিকৃত এবং তাদের মতো করে গড়ে তোলা। এখানে ‘ভিখারি' হয়ে বেঁচে থাকাটাই মানুষের নিয়তি। মুক্তির পথ সন্ধান: এই হতাশার মধ্যেই মুক্তির পথ খুঁজেছেন কবি। তাঁর মনে হয়েছে, কোথাও কিছু না থাকলেও এমন কিছু মানুষ এখনও সমাজে রয়েছে যারা তৈরি করবে সম্প্রীতির এবং সৌভ্রাতৃত্বের পথ। সেকারণেই দরকার পরস্পরের হাত ধরা। কোনো পথ দেখতে না পাওয়ার সময়ে হাতে হাত রেখে বেঁধে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।


প্রশ্ন : শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো। 


অথবা, 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবির সমাজভাবনার যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর : আর্দশহীনতা: কবিকে ব্যথিত করেছে রাজনৈতিক আদর্শহীনতা। ডান দিকে ধস আর বাম দিকে গিরিখাত জীবনের চলার পথকেই দুর্গম করে তোলে। মাথার ওপরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাণ্ডব, চারপাশে ধর্মান্ধতা, মধ্যযুগীয় বর্বরতা ইত্যাদি যেন ক্রমশই পথকে ধূসর করে দেয়। মৃত্যুর আতঙ্ক তাড়া করে সব মানুষকেই। প্রকৃত ইতিহাসের অভাব: যে জাতীয়তার ধারণা মানুষের সঙ্গে মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধতে পারত তা-ও বিরল। কারণ, “আমাদের ইতিহাস নেই”। তাই ইতিহাসের সত্যকে মানুষ পায় না, যা তাদের পথ দেখাতে পারে। ক্ষমতাবান শাসকেরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মতো করে ইতিহাস তৈরি করে নেয়। সাধারণ মানুষ সেখানে উপেক্ষিত হয়। – “আমাদের কথা কে-বা জানে/ আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।”মানব মৈত্রীর সেতুবন্ধন: তবুও কিছু মানুষ থেকে যায়, মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সেতুবন্ধ তৈরি করাই যাদের কাজ। শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘এ আমরা কী করছি' গদ্যরচনায় লিখেছিলেন— “আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা এমন এক মূঢ় অহমিকা প্রকট করে তুলতে চাইছেন দেশবাসীর মনে, ফ্যাসিবাদ যার সুনিশ্চিত পরিণাম। অথচ আজও মানুষের মনে এক স্বাভাবিক মিলনক্ষুধা আছে, এক দেশের মানুষকে আর-এক দেশের মানুষ অন্তরঙ্গ ভালোবাসাতেই জড়িয়ে নিতে চায় আজও ...”। এই ভালোবাসা আর মানবমৈত্রীর কথাই কবি উচ্চারণ করেছেন 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায়।

প্রশ্ন : আমরা ভিখারি বারোমাস।” – “আমরা' কারা? তারা নিজেদের ভিখারি বলেছে কেন কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তর : 'আমরা' যারা: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার উল্লিখিত অংশে 'আমরা' বলতে সাধারণ মানুষদের বোঝানো হয়েছে।

ভিখারি বলার কারণ: আমাদের সমাজব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিত্তবান ও ক্ষমতাবান মানুষদের দ্বারা। সমাজের অধিকাংশ যে সাধারণ মানুষ তারা সব দিক দিয়েই উপেক্ষিত থাকে। ইতিহাসে তাদের কোনো স্বীকৃতি ঘটে না। যে ইতিহাস তাদের দেওয়া হয় তা বিকৃত ইতিহাস। সাধারণ মানুষ এখানে সমস্তরকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দিন। কাটায়। “আমাদের চোখমুখ ঢাকা” অর্থাৎ মানুষ নিজের মতো করে সব কিছু দেখতে পায় না কিংবা নিজেদের কথা বলতে পারে না। ক্ষমতাশালীদের অনুগ্রহের উপরে নির্ভর করে তাদের জীবন কাটাতে হয়। এই মানুষদের কথা কেউ জানে না, তারা খ্যাতিহীন, প্রচারের আলো তাদের থেকে অনেক দূরে থাকে। কিন্তু এরাই সভ্যতার ধারক। তাই এদের দুরবস্থায় পৃথিবীর অস্তিত্বও বিপন্ন হয়। বারোমাস ‘ভিখারি' হয়ে থাকা বলতে এই অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকাকেই বোঝানো হয়েছে। উপসংহার: “আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।” যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের পাশাপাশি এই মানবিক লাঞ্ছনা যেন মানবসভ্যতার এক অসহায় অবস্থাকেই স্পষ্ট করে দেয়।

প্রশ্ন : বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো 

উত্তর : নামকরণ যে কোন সাহিত্যিক রচনার প্রবেশের চাবিকাঠি । তাই সাহিত্যের নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে। আমাদের আলোচ্য আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতাটির নামকরণে কতখানি প্রসঙ্গিক তা বিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা রকম সংকটের মধ্যে দিয়ে আজকের পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী অগ্রাসন ধর্মান্ধতা ইত্যাদি বিষয়গুলি মানবতা বিপর্যয় ঘটাচ্ছে । এই অবস্থায় মানুষের অস্তিত্বই আজ সংকটের সামনে । প্রেরণা খুঁজে নেওয়ার মতো কোনো ইতিহাস ও আমাদের নেই কারণ ক্ষমতাবানদের দ্বারা বিকৃত। তাই অন্ধ ও ভিখারী হয়ে বেঁচে থাকায় আজ মানুষের নিয়তি। সাধারণ মানুষ এখানে কোন মর্যাদায় পায়না। তবুও যাবতীয় শুভ বুদ্ধির অবসান এখনো হয়নি। সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু মানুষ রাজ্যের সম্পত্তির কথা বলে। মানুষের মানুষের মিলনের কথা বলে। আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা দুটি স্তবকের মধ্যে প্রকৃতি দু'বার ব্যবহার করেছেন কবি। মিলনের আকাঙ্ক্ষা এতে আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যঞ্জনার দিক থেকে নামকরণটি তার অত্যন্ত স্বার্থ হয়েছে ।

Tags

Post a Comment

0 Comments