আবহমান কবিতা (নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নাবলী ২০২২ | mcq প্রশ্নোত্তর | সঠিক উত্তর নির্বাচন করো | নবম শ্রেণী বাংলা আবহমান কবিতা সাজেশন | class 9th Bengali poem abohoman 2022
1. ছোট্ট ফুল কোন্ সময়ের বাতাসে দোলে ?
A) সকালের
B) সন্ধ্যার
C) বিকালের
D) গোধূলির
2. “কে এইখানে এসেছিল বছর আগে”—
A) কয়েক
B) দু-এক
C) শতেক
D) অনেক
3. কোন্ গাছটি 'বুড়িয়ে ওঠে কিন্তু মুড়য় না’?
A) নটে
B) শটি
C) পাট
D) বট
4. “ফুরয় না সেই .দুরন্ত পিপাসা”—
A) একরোখাটার
B) একগুঁয়েটার
C) একবগ্গার
D) একচোখোটার
5. সারাটা দিন আপনমনে কীসের গন্ধ মাখে ?
A) মাটির
B) ফুলের
C) ঘাসের
D) পাতার
6. নেভে না তার যন্ত্রণা যে, হয় না বাসী”
A) সুখ
B) দুঃখ
C) হাসি
D) কান্না
7. বাগান থেকে কোন্ ফুলের হাসি হারায় না?
A) চাঁপা
B) জবা
C) কেয়া
D) কুন্দ
8. ‘সান্ধ্য' শব্দের অর্থ কী?
A) অপরাহ্ন
B) সন্ধ্যাকালীন
C) প্রাক্ সন্ধ্যা
D) সায়াহ্ন
9. আবহমান' কবিতায় লাউমাচাটি ছিল—
A) বারান্দায়
B) প্রতিবেশীর বাড়িতে
C) উঠোনে
D) পুকুরপাড়ে
Only mcq
আবহমান কবিতা (নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী ২০২২ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | এক কথায় উত্তর দাও | নবম শ্রেণী বাংলা আবহমান কবিতা সাজেশন | class 9th Bengali poem abohoman 2022
1 . আবহমান' কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
উত্তর: ‘আবহমান' কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এটি ওই কাব্যগ্রন্থের তিরিশতম কবিতা।
2. ‘আবহমান’ কবিতায় কবি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন?
উত্তর: আবহমান কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রামবাংলার গরিবের উঠোনে লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।
3. কবি লাউমাচার পাশে কেন দাঁড়াতে বলেছেন?
উত্তর: কবি লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ পল্লিবাংলার প্রকৃতিলালিত সহজসরল জীবনকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়।
4. কোন্ ফুল দুলছে?
উত্তর: পল্লিবাংলায় উঠোনের লাউমাচায় ছোট্ট লাউফুল দোলে।
5. কোথায় ছোট্ট ফুল দুলছে?
উত্তর: আবহমান' কবিতায় গ্রামবাংলায় গরিবের উঠোনের লাউমাচায় ছোট্ট লাউফুল দোলার কথা বলা হয়েছে।
6. লাউফুল কখন দোলে?
উত্তর: সন্ধ্যার মৃদুমন্দ বাতাসে দোলে লাউফুল।
7. আবহমান’ কবিতায় অনেক বছর আগে কার আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: অনেক বছর আগে বাংলায় আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের আসার কথা বলা হয়েছে, যারা এদেশেরই বাসিন্দা হয়ে গেছে।
8. আবহমান' কবিতায় বাংলার ভূখণ্ডে এসে মানুষ কী করেছিল বলা হয়েছে?
উত্তর: বাংলার ভূখণ্ডে এসে মানুষ এই দেশকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে এখানেই ঘর বেঁধে বাস করতে শুরু করেছে।
9. আবহমান কবিতায় মানুষ হারিয়ে গিয়েও আবার কেন ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গ্রাম বাংলার মাটিকে, তার জলহাওয়াকে ভালোবাসে বলেই মানুষ হারিয়ে গিয়েও আবার বাংলার বুকে ফিরে আসে।
10. কবির মতে কোন্ গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না?
উত্তর: কবির মতে নটে গাছ বুড়িয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত মুড়য় না।
11. আবহমান কবিতায় মানুষের কোথায় হারিয়ে গিয়েও আবার কোথায় ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গ্রামবাংলার নতুন প্রজন্মের মানুষরা নাগরিক যন্ত্রসভ্যতায় হারিয়ে গিয়েও আবার বাঁচার জন্য গ্রামবাংলার বুকেই ফিরে আসে।
12. আবহমান' কবিতায় কাকে একগুঁয়ে বলা হয়েছে?
উত্তর: যে মানুষ তার নাগরিক জীবনকে পিছনে ফেলে গ্রাম এবং মাটির কাছাকাছি ফিরে আসে, তাকেই একগুঁয়ে বলা হয়েছে।
13. একগুঁয়েটা'র পিপাসা কী রকমের?
উত্তর: একগুঁয়েটা’র পিপাসা হল পল্লিবাংলার সহজসরল জীবন ও প্রকৃতিকে উপভোগের পিপাসা।
14. আবহমান' কবিতায় কার যন্ত্রণা নেভে না ?
উত্তর: গ্রামবাংলার সহজসরল মানুষের জীবনে যন্ত্রণার আগুন কখনও নেভে না ।
15. আবহমান' কবিতায় গ্রামবাংলার বাগান থেকে কোন্ ফুলের হাসি হারায় না ?
উত্তর: গ্রামবাংলার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি হারায় না।
16. আবহমান' কবিতায় ছায়া নামলে পরে কী ছুটে আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: পল্লিবাংলার বুকে সন্ধ্যার ছায়া নামলে পরে সন্ধ্যাকালীন নদীর হাওয়া ছুটে আসার কথা বলা হয়েছে।
17. আবহমান' কবিতায় এখনও ফুল দুলছে কেন?
উত্তর: আবহমান কাল ধরে গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্ট জর্জরিত জীবনপ্রবাহ আর প্রকৃতির সহজ রূপ একইরকম থাকায় এখনও লাউফুল দুলছে।
আবহমান কবিতা (নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলী ২০২২ | মধ্যমমানের প্রশ্নোত্তর | ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | নবম শ্রেণী বাংলা আবহমান কবিতা সাজেশন | class 9th Bengali poem abohoman 2022
1. যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া”—একথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘আবহমান' কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষকে তার একদা ফেলে-আসা গ্রামবাংলার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কারণ, জীবন সেখানে অনাবিল এবং সহজভাবে বয়ে চলে আজও। লাউমাচায় সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ছোট্ট ফুল সেই স্নিগ্ধ জীবনের প্রতীক। এই জীবনই ক্লান্ত মানুষকে বেঁচে থাকার আশ্বাস দিতে পারে, অবসন্নতার পরে তাকে আবার প্রাণময় করে তুলতে পারে। এইজন্যই কবি গ্রামবাংলার উঠোনে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন।
2. কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে” – একথা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘আবহমান' কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
:- আলোচ্য পক্তিটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, যে অনাদি অতীতে এই বাংলার ভূখণ্ডে প্রথম মানুষরা বসবাস করতে এসেছিলেন তার কথা কোনো ইতিহাস বইয়ের পাতায় লেখা নেই। কিন্তু যিনি বা যাঁরা এখানে এসেছিলেন, তাঁরা এই সুজলা সুফলা-শস্যশ্যামলা দেশকে ভালোবেসেই এখানে বসতি গড়েছিলেন। পরম মমতায় তাঁরা এই দেশকে নিজেদের আত্মার আত্মীয় করে নিয়েছিলেন।
3. কে এইখানে ঘর বেঁধেছে”— 'ঘর বেঁধেছে' কথাটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবনধারণের প্রাথমিক তিনটি চাহিদা হল অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। বাস করতে মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে। কিন্তু ঘর বাঁধা' কথাটি ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ শুধু ইট-কাঠ-পাথর দিয়ে বাসস্থান তৈরি করা নয়। এর ভিত তৈরি হয় স্নেহ-মমতামাখা সম্পর্কের উন্নতা দিয়ে এবং আপন করে নেওয়ার চেষ্টা থেকেই। বাংলায় আসা মানুষজনও সেভাবেই এদেশকে ভালোবেসে এখানে ঘর বেঁধেছে।
4. কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে” উদ্ধৃত পঙ্কিটিতে কবির বক্তব্য সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “আবহমান’ কবিতায় নগরজীবনের যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত মানুষের গ্রামজীবনের টানে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। একদা মানুষ তার গভীর ভালোবাসায় আশ্রয় নিয়েছিল গ্রামবাংলায়। আপন করে নিয়েছিল তার আশ্রয়কে। কিন্তু গ্রামীণ সভ্যতার ভাঙন ঘটিয়ে নগরসভ্যতার বিকাশে মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাস, আড়ম্বরের উলটোদিকে সেখানে তৈরি হয় ব্যস্ততা, ক্লান্তি, অবসাদ। মানুষকে তাই বারবার শিকড়ের সন্ধানে বেঁচে থাকার তাগিদে ফিরে আসতে হয় তার ফেলে যাওয়া গ্রাম আর প্রকৃতির কাছে।
5. ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা | একথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: নগরসভ্যতার সৃষ্টির সঙ্গেই গ্রাম থেকে মানুষের শহরের উদ্দেশ্যে চলা এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দের খোঁজে মানুষের এই চলা অবিরাম। কিন্তু ফিরে আসার প্রক্রিয়াও এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে থাকে। যন্ত্রসভ্যতার চাপে ক্লান্ত, অবসন্ন মানুষ চায় অবসর। তখনই সে ফিরে আসে গ্রামে। প্রকৃতির সহজ জীবনধারার সংস্পর্শে এসেই নাগরিক মানুষ পেতে চায় মুক্তির নিশ্বাস। এভাবেই অবিরাম যাওয়া-আসা চলতেই থাকে।
6. নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না পংক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর আবহমান' কবিতায় দেখিয়েছেন যে, একদা মানুষ নিবিড় অনুরাগে ঘর বেঁধেছিল গ্রামবাংলায়। পরবর্তীকালে গ্রামসভ্যতার সমৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায় নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনে। কিন্তু প্রকৃতি সেখানে নিজের হাতে একইভাবে সাজিয়ে রাখে, জীবন বয়ে চলে স্বচ্ছন্দ সহজ গতিতে। আর শহরের ক্লান্ত মানুষেরা শান্তির খোঁজে বারবার ফিরে আসে তার কাছে। 'নটে গাছটা বুড়িয়ে ওঠে; কিন্তু 'মুড়য় না' অর্থাৎ তার গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয় না।
7. কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে" পদ্ধতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় যে মানুষ একদিন গভীর অনুরাগ দিয়ে গ্রামসভ্যতা গড়ে তুলেছিল সেই মানুষই নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য আর সমৃদ্ধির আকর্ষণে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু শহরজীবন বৈভব আর সমৃদ্ধি দিলেও মানুষকে শাস্তি দিতে পারেনি। তাই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ আবার শান্তির সন্ধানে গ্রামেই ফিরে আসে।
8. সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে" কে কেন ঘাসের গন্ধ মাখে ?
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় যে মানুষ শহরজীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তার সমৃদ্ধি আর স্বচ্ছলতার আড়ালে থাকে গ্রামজীবনে ফিরে আসার আর্তি। মনের মধ্যে ফিরে আসার এই আকুলতাকেই কবি বলেছেন 'একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা'। এই পিপাসাতেই সে সারাদিন প্রকৃতি আর গ্রামের সান্নিধ্য পাওয়ার আশাকে বাঁচিয়ে রাখে। “আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে”— এই কথাটির মধ্যে দিয়ে প্রকৃতির প্রতি মানুষের সেই আকর্ষণকেই বোঝানো হয়েছে।
9. হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি” পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কোন্ জীবনসত্যকে তুলে ধরেছেন?
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় কবি গ্রাম -বাংলার সহজসরল, অনাবিল জীবনধারার কথা তুলে ধরেছেন। প্রকৃতিলালিত এই জীবনধারা গ্রামের মধ্যে চিরবহমান। সেখানে দুঃখ-যন্ত্রণা অব্যাহত থাকলেও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয় না। জীবনের সহজ প্রবাহ এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই অবিনশ্বরতাকে বোঝাতে “হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
10. এখনও সেই ফুল দুলছে”— পক্তিটিতে ব্যবহৃত 'এখনও' শব্দটির তাৎপর্য কী ?
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতি এবং জীবনের চিরকালীনতাকে বোঝানো হয়েছে। একসময় গভীর অনুরাণে মানুষ বসতি নির্মাণ করেছিল। যে মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে গড়ে উঠেছিল গ্রামসভ্যতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার গৌরব নষ্ট হয়ে গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যের পরিমা একইরকম থাকে। 'এখনও সেই ফুল দুলছে' কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামজীবন ও গ্রাম্য প্রকৃতির সেই চিরকালীনতাকেই বোঝানো হয়েছে।
আবহমান কবিতা (নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী) রচনাধর্মী ২০২২ | বড়ো প্রশ্নোত্তর | সাত নম্বরের প্রশ্ন উত্তর | নবম শ্রেণী বাংলা আবহমান কবিতা সাজেশন | class 9th Bengali poem abohoman 2022
প্রশ্ন : আবহমান' কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: যে-কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই পাঠকের মনে লেখাটি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে দেবার চেষ্টা করেন সাহিত্যস্রষ্টা। পাঠককে আকর্ষণ করার তাগিদ থেকেই স্রষ্টা তার সাহিত্যকর্মের নামকরণের দিকটিতে লক্ষ রাখেন। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু, ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুসারে নামকরণ করা হয়ে থাকে।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত আলোচ্য কবিতাটির নাম ‘আবহমান'। 'আবহমান' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ক্রমাগত বা চিরপ্রচলিত। সহজ কথায় যুগ যুগ ধরে একইভাবে চলে আসা যে-কোনো কিছুকেই আবহমান বলা হয়। 'আবহমান' কবিতায় কবি গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্টে ভরা অথচ অনাবিল এবং প্রকৃতিলালিত জীবনের চিরন্তন ছবিকে নিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। অনাদি অতীতে মানুষ সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাকে ভালোবেসে এখানেই বসতি বানিয়েছিল। 'আবহমান' কবিতায় লাউমাচার পাশে সেই সহজ-সুন্দর গ্রামজীবনকেই পাওয়া যায়। করি এই লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ সেখান থেকেই নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে পেতে পারে শান্তির নিশ্বাস। মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে মানুষ তাই গিয়ে দাঁড়ায় সেই প্রকৃতির কাছে। ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রেখে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়।
অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যেও এদেশের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে, হাসিমুখে দু-চোখে নতুন জীবনের স্বপ্ন এঁকে বংশানুক্রমে তার জীবনপ্রবাহকে সচল রেখেছে। এই প্রকৃতির দ্বারা লালিত জীবন থেকেই সুখ খুঁজে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে চলে নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ। যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা বাংলার গ্রামজীবন, তার প্রকৃতি আর তার কাছে মানুষের ঋণের কাহিনি এই কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলা যায় কবিতাটির ‘আবহমান’নামটি অসাধারণ ব্যঞ্জনাধর্মী এবং যথাযথ।
প্রশ্ন : ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা'— এখানে 'একগুঁয়েটার দুরত্ত পিপাসা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? | পিপাসা ফুরোয় না বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় সৌন্দর্যের জন্য যে মানুষের মধ্যে আকুলতা দেখা যায়, তাকেই ‘একগুঁয়ে’ বলা হয়েছে। 'একগুঁয়ে মানুষটির মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি এবং গ্রামজীবনের কাছে ফিরে আসার আকর্ষণ। এই ফিরে আসার ইচ্ছাকেই কবি দুরন্ত পিপাসা' বলেছেন।
• একদা গ্রামজীবনকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে মানুষ তার বসতি তৈরি করেছিল। নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিল জীবনের ছন্দ। বাংলার মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে তারা ঘর বেঁধেছিল। উঠোনের লাউমাচার ছোট্ট ফুল ছিল সেই সযত্নলালিত জীবনের প্রতীক। পরবর্তীকালে নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুখের সন্ধানে মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু শহরজীবন তাকে বিত্ত-বৈভবের অধিকারী করলেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সন্ধান দিতে পারে না। ক্লান্তি আর অবসন্নতা ঘিরে ধরে তাকে। যন্ত্রসভ্যতার দমবন্ধ করা চাপে হাঁপিয়ে ওঠে মানুষ। এখান থেকে তার মধ্যে তীব্র হয় ফিরে আসার আর্তি। গ্রামজীবনের সারল্য আর প্রকৃতির সহজতা তার মধ্যে এই ফিরে আসার আকর্ষণ তৈরি করে। মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে ফিরে আসা তাই চলতেই থাকে। সারাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারারাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার যে আকাঙ্ক্ষা, তা মানুষের মনে চিরকালীন, কখনোই ফুরোয় না।
প্রশ্ন : ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না”— এখানে কী না ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে? কেন কিছুই ফুরোয় না?
উত্তর : নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতায় প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য মানুষের চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা তা না ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে।
অনেক বছর আগে মানুষ যখন গ্রামবাংলায় এসেছিল। এবং ঘর বেঁধেছিল—তার সেই চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিল গভীর ভালোবাসা। এদেশের মাটি, বাতাসের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছিল সে। শুধুই আশ্রয় নয়, তার কাছে স্বদেশ এবং স্বভূমি ছিল আত্মার কখন। কিন্তু পরবর্তীকালে গ্রামসভ্যতার গৌরব অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। মানুষ ক্রমশ শহরমুখী হয়েছে। নগরসভ্যতার সুযোগসুবিধা, স্বাচ্ছন্দ্য তাকে আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু শহরজীবনে মানুষ সমৃদ্ধি পেলেও শান্তি পায়নি। বরং যন্ত্রসভ্যতার ক্রমাগত চাপে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এখানেই তার আশ্রয় হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি আর সেই প্রকৃতির ছন্দে গাঁথা জীবন। একদা যে মানুষ ভালোবেসে তার ঘর বেঁধেছিল গ্রামবাংলায়, তার উত্তর প্রজন্মের মধ্য দিয়ে সে যেন আবার ফিরে আসে এই প্রকৃতিলালিত জীবনে—যখনই সুযোগ পায়। তার আগমনের পটভূমি তৈরি করে রাখে উঠোনের লাউমাচা, সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ছোট্ট ফুল। একগুঁয়ে মানুষের দুরন্ত পিপাসা যেভাবে তাকে বারেবারে এনে ফেলে পুরোনো জীবনের চেনা ছন্দে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই কবির মনে হয়েছে কোনো কিছুই শেষ হয়ে যায় না। বাগানের কুন্দফুলের হাসি থেকে সূর্য ওঠা, ছায়া নামা, সন্ধ্যাবেলা নদীর বাতাসের বয়ে চলা—কিছুই শেষ হয় না, যেমন শেষ হয় না সেই প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার জন্য মানুষের আকুলতার।
প্রশ্ন : গীতিকবিতা হিসেবে 'আবহমান' কবিতাটির সার্থকতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'আবহমান' কবিতাটি একজন মানুষের তার শিকড়ের কাছে, ফেলে আসা গ্রামজীবনের এবং গ্রামীণ প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার কাহিনি। স্বাভাবিকভাবেই কবির আবেগ এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধিই এই কবিতার মূল উপকরণ।
“যা গিয়ে ওই উঠানে তোর পাড়া, / লাউমাচাটার পাশে।"
ফেলে আসা দিনের সঙ্গে কবিতার এই সংযোগ শুরুতেই কবিতাকে স্মৃতিকাতর করে তোলে। লাউমাচা, সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ফুল—হারিয়ে যাওয়া গ্রামজীবনকে প্রতীকের সাহায্যে তুলে ধরেন কবি। আবার কবিতাকে পৌঁছে দেন দুর অতীতে এক অনির্দিষ্টের মাধ্যমে
“কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে, কে এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে।”
ভালোবাসা আর মায়াময়তার বিস্তারে যে রোমান্টিকতা তৈরি করে দেন কবি, তা গীতিকবিতার ধর্মকেই প্রতিষ্ঠা করে। ঘাসের গন্ধ, তারায় তারায় এঁকে দেওয়া স্বপ্ন, কুন্দফুলের হাসি—এরকম সব চিত্রকল্প তৈরির মধ্যে দিয়ে কবিতায় কল্পনা এবং সৌন্দর্যকে মিশিয়ে নিয়েছেন কবি। সব মিলিয়েই কবিতায় গীতিধর্মিতার সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন কবি। অন্ত্যমিলের অসাধারণ প্রয়োগে এই গীতিময়তা আরও বিস্তার লাভ করেছে। এভাবে কল্পনার নিবিড়তায়, রোমান্টিকতার বিস্তারে, গীতিময়তার ব্যঞ্ছনায় গীতিকবিতা হিসেবে 'আবহমান' সার্থক হয়ে উঠেছে।
Thank you for comment 🤗