Type Here to Get Search Results !

বলবান জামাতা গল্প (প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) সাজেশন ২০২২ || বলবান জামাতা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর || B.a First year Bengali balaban jamata story

 


বলবান জামাতা (প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) সংক্ষিপ্ত /অতিসংক্ষিপ্ত  গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর ২০২২

বলবান জামাতা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বলবান যে মত গল্পের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর || B.A FIRST YEAR BANGLA PRAVAT KUMAR STORY BALABAN JAMATA 


১। বলবান জামাতা' গল্পটি কবে লেখা হয় ?

উ: বলবান জামাতা' গল্পটি বৈশাখ, ১৩১৩ বঙ্গাব্দে লেখা হয়।

২। 'বলবান জামাতা' গল্পটি করে কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?

উ: বলবান জামাতা গল্পটি মাসিক প্রবাসী পত্রিকায় ১৩১৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় ছাপা হয়।

৩। প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদকের নাম কী?

উ: প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক হলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

৪। ‘বলবান জামাতা' গল্পটি কোন গল্প গ্রন্থের অন্তর্গত?

উ: বলবান জামাতা গল্পটি লেখকের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ষোড়শীর

৫। ষোড়শী' গল্পগ্রন্থের প্রকাশকাল উল্লেখ কর ?

উ: ষোড়শী' গল্পগ্রন্থের প্রথম প্রকাশ আশ্বিন, ১৩১৩ বঙ্গাব্দ।

৬। বলবান জামাতা গল্পটির সমালোচনা কবে কোথায় প্রকাশিত হয় ?

উ: বলবান জামাতা গল্পটির প্রথম সমালোচনা হয় সাহিত্য পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩১৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। 

৭। প্রভাতকুমারের প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম কী?

উঃ প্রভাতকুমারের প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম নরকথা। 

৮। 'বলবান জামাতা' গল্পের নাট্যরূপ কে দান করে? সেই নাট্যরূপের নাম কী ?

উঃ ভারতী পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় বলবান জামাতার নাট্যরূপ দান করেন। বলবান জামাতার নাট্যরূপ হল 'গ্রহের ফেরা।

৯। 'বলবান জামাতা' কী ধরনের গল্প?

উঃ 'বলবান জামাতা' একটি কৌতুক রসাশ্রিত গল্প।

১০। নলিনীবাবু কে ছিলেন?

উ: নলিনীবাবু ছিলেন আলিপুরের পোস্ট মাস্টার।

১১। নলিনীবাবু কীসের ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য স্থির করেছিলেন?

উঃ নলিনীবাবু পুজোর ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য স্থির করেছিলেন।

১২। নলিনীবাবুর স্ত্রীর নাম কী ছিল?

উঃ নলিনীবাবুর স্ত্রীর নাম ছিল সরোজিনী দেবী। 

১৩। নলিনীবাবুর শ্বশুরবাড়ি কোথায় ছিল?

উ: নলিনীবাবুর শ্বশুরবাড়ি ছিল এলাহাবাদে।

১৪। ননিনীবাবু বহুবার কী পাঠ করেছিলেন?

উ: নলিনীবাবু তাঁর স্ত্রীর পাঠানো পত্রটি বহুবার পাঠ করেছিলেন। 

১৫। নলিনীবাবুর স্ত্রীর পাঠানো পরে কীসের ছবি ছিল?

উ: নলিনীবাবর স্ত্রীর পাঠানো পত্রে একটি পাখির ছবি ছিল।

১৬। নলিনীর বিবাহ হয়েছিল কত বৎসর ? 

উ: নলিনীর বিবাহ হয়েছিল দুই বৎসর।

১৭। নলিনীবাবুর স্ত্রী সরোজিনী তার চিঠিতে কার আসার সংবাদ দিয়েছে?

উ: নলিনীবাবুর স্ত্রী সরোজিনী তার চিঠিতে তার দিনাজপুরের মেজদির আসার সংবাদ দিয়েছে। 

১৮। কটার সময় নলিনীবাবু টেলিফোনে ছুটি মঞ্জুরের সংবাদ পেয়ে ছিলেন?

উ: পাঁচটা বাজতে যখন দু'এক মিনিট বাকি তখন নলিনীবাবু টেলিফোনে ছুটি মঞ্জুরের সংবাদ পেয়েছিলেন।

১৯। নলিনীবাবু কত দিনের ছুটি পেয়েছিলেন? 

উ: নলিনী দুই সপ্তাহের ছুটি পেয়েছিলেন।

২০। পোস্ট অফিসের চার্জ কাকে বুঝিয়ে দিয়ে নলিনীবাবু রওনা হবেন ?

উঃ ডেপুটি পোস্ট মাস্টারকে পোস্ট অফিসের চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে নলিনীবাবু রওনা হবেন। 

২১। নলিনীবাবুর ছুটি এসে ছিল কোন দিন?

উ: নলিনীবাবুর ছুটি এসে ছিল চতুর্থীর দিনে।

২২। দিনাজপুরের কার উপর মলিনীর রাগ ছিল এবং কেন?

উ: দিনাজপুরের মেজদির উপর নলিনী রাগ ছিল। কারণ মেজদি নলিনীর নিটোল চেহরা নিয়ে কটাক্ষ, ব্যাঙ্গ করেছিল। 

২৩। সরোজিনীর মেজদির নাম কী ছিল?

উঃ সরোজিনীর মেজদির নাম ছিল শ্রীমতী কুণ্ডুবালা দেবী। 

২৪। মেজদি অর্থাৎ কুণ্ডুবালা দেবীর স্বামী কে ছিলেন?

উ: মেজদি অর্থাৎ কুরবালা দেবীর স্বামী ছিলেন সাহেব লোক, দিনাজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।


বলবান জামাতা (প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) মধ্যম মানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর ২০২২ 


বলবান জামাতা গল্পের মধ্যমমানের প্রশ্নোত্তর||বলবান জামাতা গল্পের ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর || B.A FIRST YEAR BANGLA PRAVAT KUMAR STORY BALABAN JAMATA 


১। বলবান জামাতা' গল্পের নায়ক চরিত্রটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর

উত্তর : বলবান জামাতা' গল্পের প্রধান চরিত্র এবং নায়ক ও নলিনী। নলিনীর জামাই বেশ ভদ্র, স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির প্রতি অনুগত। তার ব্যায়াম চর্চা, শিকার করা শিক্ষা, তার দাড়ি রাখা এগুলো যথার্থ কমেডির মধ্যে বাতিমাত্রা চরিত্রের। বিয়ের আসর থেকেই শালিকার কটাক্ষ ও শ্লেষের জালা সে ভুলতে পারেনি। তার শালিকা সুন্দরী রমনী হওয়ায়, ক্ষোভ ও অপমানের মাত্রা আর বেড়ে যায়। বিয়ের পর একাকী আলিপুরের বাসায় এসে সেই অপমানের জ্বালা তিনি তুলতে পারেননি। একদিন ফিরলে বসে চিন্তা করার সময়ে তার মনে ব্যায়ামের যারা শরীর কাঠামোর পরিবর্তন সাধনের কথা উদয় হয়। শোক থেকে শ্লোকের উদ্ভব হয়েছিল, নলিনীবাবুর ক্ষেত্রে প্লেয় থেকে মানুষিক সংকল্পের উদয় হল। এর পরেই দীর্ঘ দু বছর ধরে চলল নলিনীবাবুর শরীর সাধনা। এক বৎসরের মধ্যে তিনি। সাধনার ফল পেলেন। তাঁর অগা প্রত্যশা দৃঢ় হল।

দীর্ঘ দুবছর ধরে শরীর সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে সুঠাম বলশালী হয়ে উঠলেন। গল্পের প্রথম দিকে নলিনা নিজেকে তৈরি হয়েছে, পরে এলাহাবাদে আসার গল্পকারের হাতের পুতুল হয়েছে। নলিনী সবটাই কৌতুক চরিত্রের নয়। সমগ্র গল্পে সে অনেকটা সুস্থ। তার রোগা হওয়ার বাতিক ইত্যাদি বাদ দিলে সে বাকি গল্পে সুস্থ। গ্রহের ফেরে সে বিপর্যস্ত। তার শালিকা বুঝবালা। নলিনীকে দেখে বলেছে—“নলিনী আমাদের ননীর পুতুল। এত দেখলাম একটা কাঠ খোট্টা জন্তুয়ান।" কৃষ্ণ বালার মতে এই ব্যক্তি ননীর পুতুল নলিনী হতে পারে না। কৃষ্ণ বালার এই ধারণা গল্পে মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। গল্পের পরিণামে দুই বাড়ির আদর যত্নের তার তথ্যের কথা এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির লজ্জার কাছে কিছু মন্তব্য বা বিরাগ না প্রকাশে— তাতে গল্পের সঠিক পরিণামে এবং প্রচ্ছন্ন শ্লেষে শিল্প ব্যঞ্জনা চরিত্র অনুযায়ী হয়েছে।


২। বলবান জামাতা' গল্পে কুণ্ডবালা চরিত্রটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর

উত্তর : এই গল্পে একটি বিশেষ চরিত্র কৃষ্ণবালা। সে নলিনীর সম্পর্কে শ্যালিকা। দিনাজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বধূ। সুশিক্ষিতা, সুরটি সম্পূর্ণা। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ, এবং তৎকালীন বাংলাদেশের মেয়েরা যে আদর্শে পালিত হত। তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এ গল্পে ফুরবালা। এক কথায় কুরবালা আলোক প্রাপ্তা দেশপ্রেমী। সাধারণ মেয়েদের জীবন চর্যার সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য নেই। দেওয়ের কেনা সুগন্ধি তেল দেখে কুবালার মন্তব্যটি যেমন বিদ্রূপাত্মক তেমনি ক্ষুরধার – "দূর—ও জিনিস ত কেবল স্ত্রীলোক আর বাবুতে মাখে : পুরুষ মানুষ কখন অ সুগন্ধি ব্যবহার করে?” অর্থাৎ বউদির তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ সে বুঝতে পারে না। বলা বাহুল্য কুরবালার রসনাটি ক্ষুরধার।

ছোট বোনের বিবাহ সভায় বড় বেশি নলিনীর নাদুস নুদুস নন্দদুলার মার্কা চেহারা এবং মোলায়েম ভুঁড়ি দেখে বিদ্রূপের প্রয়োজন সংবরণ করতে না পেরে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা কিছু পরিবর্তন, করে বলেছেন—

"নলিনীর মত চেহারা তাহার নলিনী যাহার নাম, 

কেমন কোমল কোমল অতি যেমন কোমল নাম,

যেমন কোমল, তেমনি বিকল, তেমনি আলস্য ধাম,

নলিনীর মত চেহারা তাহার নলিনী যাহার নাম।"

শ্যালিকা জামাইবাবুর সম্বন্ধ সম্পর্কের মধ্যে পরিহাস অবাঞ্ছনীয় নয়। কুরবালা সম্পর্কে বড়ো শ্যালিকা হয়েও ছোটো বোনের স্বামীকে যে শ্লেষাত্মক পরিহাস করেছেন তা হয়ত শ্রীলতার গোল্ডি অতিক্রম করেছে। আসলে বাঞ্ছনীয় নয় এমন সব কিছুতেই তার মন্তব্য করা চাই। অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনার অপেক্ষা রাখে না। রাজকর্মচারীর স্ত্রী হলেও, এই একই কারণে সে স্বদেশী কবিতা লিখে দেশপ্রেমের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি।

৩। বলবান জামাতা গল্পের গঠন কৌশল বর্ণনা কর

উত্তর: বলবান জামাতা গত্রের গঠন কৌশল নির্মাণে প্রভাতকুমারের শিল্প প্রতিভা খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। 

আলিপুরের পোস্ট মাস্টার নলিনীবাবু সামনের পূজোয় এলাহাবাদে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন। পুজোর ছুটির সংবাদ পেয়েই সে বেড়িয়ে পড়ে ট্রেন ধরে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। তাঁর শ্বশুরবাড়ির যাওয়ার উৎকণ্ঠা ও আগ্রহের কারণ হল বিবাহের সময় বাসর ঘরে তার শ্যালিকার কুরবালার কৌতুক ও বিদ্রূপের শ্লেষ তার মনে দাগ কেটেছিল, যা সে ভুলতে পারেনি। শ্যালিকাকে উপযুক্ত মনের মতো জবাব দেওয়ার জন্য সে এক বছর ধরে ব্যায়াম চর্চা, খাদ্যভ্যাস, শিকারে অভ্যাস করে, স্বভাবে নতুন সুবলিষ্ঠ পুরুষ হয়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়িতে সে তার জামা কাপড়ের বাজের সঙ্গে শিকারের উপযোগী বন্দুকও নিয়ে আসে। ভুল বসত নলিনী মহেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়ি চলে আসে, পড়ে আলাপ আলোচনার পর নলিনী নিজের শ্বশুর মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যয়ের বাড়ি আসেন। নলিনীকে শ্বশুরবাড়ির লোক চিনতে পারে না, কারণ, নলিনীর দেহের গঠনের স্বভাবের অনেক পরিবর্তন ঘটে ছিল। তাই মহেন্দ্রবাবু ভৃত্য দিয়ে নলিনীকে বাড়ি থেকে ডাকাত বলে তাড়িয়ে দেয়। শেষে ভুল বুঝতে পেরে মহেন্দ্রবাবু নিজেই জামাই নলিনীকে স্টেশন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে।

শ্বশুর বাড়িতে ফিরে এসে নলিনী, সকলকে লজ্জিত ও অনুতপ্ত দেখে সে আর প্রতিশোধমূলক কোনো আচরণ করেনি, ঠাট্টা, তামাসা, বিদ্রুপ থেকে সে নিজেকে বিরত রেখেছিল। বলবান জামাতা গল্পের প্লটে প্রভাতকুমার শেষ পর্যন্ত নলিনীর ভাবনা দিয়ে গল্প শেষ করার রীতিতে গল্পে এত চরিত্রের ভিড়েও নায়কের প্রত্যক্ষ বাস্তব অভিজ্ঞতার শ্লেষ ভিত্তিটি সঠিক রাখতে পেরেছেন। এখানেই এই গল্পের গঠন কৌশলে চরিত্র নির্ভর প্লট রচনায় প্রভাতকুমারের অন্যতম শিল্প কৃতিত্ব।


৪। বলবান জামাতা' গল্পে কৌতুক রসের বর্ণনা কর।

উত্তর : বলবান জামাতা' গল্পটি আদ্যন্ত নির্মল কৌতুক রসের গল্প। এই গল্পে প্রচ্ছন্ন কৌতুক রস পাঠক মনে আনন্দের স্ফুরণ ঘটিয়ে ছিল। বাঙালি সমাজে স্ত্রীর পাশে আদরে ও কৌতুকে শ্যালিকার আদর জামাইয়ের কাছে বেশি ছিল। গল্পকার এই গল্পে নলিনী আর শ্যালিকা ঝুঞ্ঝবালার আচার-আচরণ ও শ্লেষ কথোপকথন দ্বারা তা ব্যক্ত করেছেন। শ্যালিকার প্রতি অর্থাৎ কুঞ্ঝবালার প্রতি রাগ, অভিমান, প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভঙ্গি এক নতুন রস বিষয় ফুটে উঠেছে। গল্পে শ্যালিকা কুরবালার প্রতি রাগে নলিনীর ব্যক্তিত্বে ও ব্যবহারে, মনেও চিন্তা ভাবনায় যে অসঙ্গতির শুরু হয়ে ছিল, তারই হাস্যজনক রূপ হল তার চেহারার রূপান্তর যা অফুরম্ভ লঘু রসের জোগান দেয়। এই গল্পের নায়ক নলিনীর আচার-আচরণে কৌতুক রসের প্রবাহ ধরা পড়েছে। নলিনী ভুল বসত মহেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে এসেছে এবং জানার পর সে নিশ্চিন্ত মনে একে একে জল খাবারের পাত্রে দেওয়া খাবার গুলি খেয়েছে। এই যে সংকটকালে নলিনী নিশ্চিন্ত মনে অন্যের বাড়িতে খাবার ভক্ষণের দৃশ্য যা মিলন হিউমারের প্রকাশ ঘটেছে।

নলিনীকে চিনতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে শ্বশুর মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছে— “বেটা জোয়া চোর! তুমি শ্বশুর চেন আর আমি জামাই চিনিনে? আমার জামাইয়ের এরকম গুন্ডার মত চেহারা?”—এই যে attitude-এর নিষ্ফলত্ব ও অসম্পাতি অসামান্য কৌতুক রসের জোগান দেয় এই গল্পে। বস্তুত এই বিলবান জামাতা' গল্পের কৌতুক রসের প্রভাস দেখা যায়—নায়কের চরিত্রের বিচিত্র মানসিকতায়, শ্যালিকার প্রতি অভিমানে, একই নামে দুই উকিলের একই এলাকায় বসবাসের মধ্য দিয়ে, জামাইকে চিনতে না পেরে অকথ্য আচরণের দ্বারা, গল্পটিতে সমস্ত অসঙ্গতির সীমাতিশায়ী স্বভাব তাৎপর্যে, শীতল স্বভাবে মেনে নেওয়ার বিস্ময়ে কৌতুক রস আদ্যন্ত ঘটনা ও চরিত্রদের মধ্যে সুক্ষ্ম সূত্রের জন্ম দিয়েছে। কোথাও এতটুকু বার্তি প্রসঙ্গ নেই। এক প্রসঙ্গ থেকে আর এক প্রসঙ্গে যাওয়া-আসার স্বভাবিকত্ব গল্পটির কৌতুক রসের গৌরব।

বলবান জামাতা (প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) রচনাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর ২০২২ 


বলবান জামাতা গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর||বলবান জামাতা গল্পের ১০ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর ||বড় প্রশ্নের উত্তর || B.A FIRST YEAR BANGLA PRAVAT KUMAR STORY BALABAN JAMATA 


১। যা হোক, পরের শ্বশুরবাড়িতে উঠে যে আদর পেয়েছিলাম। অনেকে সেরকম নিজের শ্বশুর বাড়িতে পায় না এই আদরের বিষয়টি নির্দিষ্ট গল্প অনুসারে লিপিবদ্ধ করো। 

উত্তর : প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর ছোটো গল্পের ক্ষেত্রে একটি বিশেষস্থান অধিকার করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্র ছিল এক বিশেষ ভূখণ্ড যা পূর্ববঙ্গা ও মধ্যবঙ্গোর মধ্যে সীমাবদ্ধ, সেই ভৌগোলিক সীমা, পরিধির বাইরে প্রভাত কুমার নিজস্ব স্বকীয়তায় তাঁর গল্প ক্ষেত্রকে প্রসারিত করলেন। গভীর আবেগ, তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ কুশলতা, অবচেতনের প্রক্ষেপ, মন্ত্রীচৈতন্যের লীলা, প্রবৃত্তির সংঘর্ষ তাঁর ছোটোগল্পগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায় না, দেখা যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৈষম্য ও অসঙ্গতি, ক্ষুদ্র আশা ও তার পরিণতি। এই ক্ষুদ্র আশা ও পরিণতি নিয়েই তিনি অতি সহজেই পাঠক মহলের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের জীবন-যাপন, আচার-আচরণ ইত্যাদি নিয়ে অতি সাধারণভাবে তিনি গল্পগুলি লিখেছেন। এই রকমই একটি গল্প হল ‘বলবান জামাতা। মহেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-এর জামাতা নলিনীকান্ত মুখোপাধ্যায়। মহেন্দ্রবাবুর কনিষ্ঠ কন্যা সরোজিনীর সঙ্গে নলিনীকান্তর বিয়ে হয়। নলিনী আলিপুরের পোস্টমাস্টার। নলিনীর শ্বশুরের কর্মস্থল এলাহাবাদ। তাই বিয়ের পর নলিনী কলকাতায় ফিরে এলে তার স্ত্রী সরোজিনী সমেত স্বশুর মশায় কর্মস্থান এলাহাবাদে ফিরে যায়। বিবাহের পর দুই বছর স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে নলিনীর দেখা হয়নি। স্ত্রীর সঙ্গে পত্রের মধ্য দিয়ে আলাপচারিতা চলে। সরোজিনী পূজার ছুটিতে আসার জন্য অনুযোগপূর্ণ চিঠি লিখে স্বামীকে এলাহাবাদে আসতে বলে। নলিনীর ছুটির দরখাস্ত হেড অফিসে মঞ্জুর হয়ে যাবার ফলে শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য তৈরি হয়। বিয়ের সময় নলিনী ছিল— " গোলগাল নন্দদুলালি ধরনের .... । গাল দুইটি টেবোটেবো, হাত দু'খানি নবনীতোপম, প্রকোষ্ঠ দেশের কোমল অস্থিগুলি কোমলতর মাংসে সম্পূর্ণভাবে প্রচ্ছন্ন এই কারণে তার মেজ শ্যালিকা কুম্ভবালা বিবাহের দিন বাসর ঘরে বিদ্রুপ করেছিল। সে বিদ্রূপ ভুলতে পারেনি। বলেই শরীরচর্চা করে—“তাঁহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদি বিলক্ষণ দৃঢ় হইল। তখন স্বীয় মূর্তি আরও অধিক মাত্রায় পুরুষ করিবার অভিপ্রায়ে তিনি দাড়ি কামানো বন্ধ করিয়া দিলেন।" এবং "তাঁহার কপোলাদেশ বসাশূন্য, চিবুকাগ্রভাগ সূক্ষ্মতাপ্রাপ্ত, হস্তপাদাপি অস্থিবহুল হইয়াছে; ফলত তিনি নামের এখন সম্পূর্ণ অযোগ্য হইয়া উঠিয়াছেন । এরপর থেকে কুবালার সঙ্গে তার একটিবার দেখা করার অভিপ্রায় মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। যখন সে শোনে মেজ শ্যালিকা পূজার সময় এলাহাবাদ আসছে তখন শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য আরও উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে। যাবার আগে "জিনিসপত্র কিনিয়া, বাক্স তোরকা সাজাইয়া শশুরকে টেলিগ্রাম করে দিয়ে কলকাতার নলিনী এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হল। পরের দিন বেলা দুইটার সময়, নলিনীবাবু এলাহাবাদ স্টেশনে অবতরণ করে দেখল তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউই আনতে আসেনি, তখন মনে করল টেলিগ্রাম' হয়তো সময়মতো পৌঁছায়নি। তাই গাড়োয়ানকে মহেন্দ্র উকিল-এর বাড়িতে নিয়ে যেতে বলতে গাড়োয়ান নলিনীকে মহেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির চাকর বাকরা কেউই জামাইকে চেনে না। তাই মহেন্দ্রবাবু বাড়িতে আছে কিনা জানতে চাইলে বাড়ির চাকর বলে “না। তিনি কেদারবাবু উকিলের বাড়ি পাশা খেলতে গিয়েছেন। এই কথা শুনে নলিনী বলে— "আচ্ছা—ভিতরে খবর দাও, বল জামাইবাবু এসেছেন। একথা শুনে চাকর রামশরণ প্রণাম করে নলিনীকে ভিতর বাড়িতে নিয়ে গেল। জামাই-এর জন্য সবাই বাস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে বাড়ির ঝি কয়েকমাস বয়স্ক একটা বাচ্চাকে নলিনীর কোলে দিলে সে অবাক হয়ে যায়, তারপর ঝির কাছ থেকে যখন শোনে সেটা তারই ছেলে সে তখন আরও অবাক হয়ে যায়। ঠাটা মনে করে সে চুপ করে থাকে। এরপর রামশরণ বলে "বাবু আসুন জলখাবার দেওয়া হয়েছে। নলিনী উঠে গিয়ে দেখল— "তাহার সম্মুখে রূপার রেকাবি, বাটী, গেলাস ভরা নানাবিধ খাদ্য ও পানীয়। নলিনী ধীরে ধীরে আসনখানির ওপর উপবেশন করিয়া জলযোগে মন দিল । সেই সময় বাড়ির মেজমেয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে এসে অন্যপুরুষ দেখে পালিয়ে যায়। বাড়িময় শোরগোল পড়ে যায়। সবাই নলিনীকে মহেন্দ্র ঘোষের জামাই শরৎ বলে ভেবেছিল। কিন্তু ধারণা যখন ভাঙে চোর, জোচ্চোর বলতে আরম্ভ করে। মহেন্দ্রবাবুকে চাকর খবর দিতে গিয়ে বলে “বাড়িমে একঠো ডাকু হোবে কি জুয়াচোর হোবে কি পাগল আমি হোবে কিছু ঠিকানা নাই। সে বলে কি হামি বাবুর দামাদ আছি।" এই কথা শুনে তৎক্ষণাৎ মহেন্দ্রবাবু আসেন। মহেন্দ্রবাবুকে তখন নলিনী বলে— “আমার নাম নলিনীকান্ত মুখোপাধ্যায়। আমি মাহেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের জামাতা এলাহাবাদে দুইজন মহেন্দ্রবাবু উকিল থাকার ফলে গাড়োয়ান ভুল করে ফেলে। মহেন্দ্ৰ ঘোষ, মহেন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানতো তাই তাকে অভ্যর্থনার ত্রুটি করল না পরে গাড়ি করে নলিনীর আসল শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিল। মহেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নলিনী গিয়ে জামাই বলে পরিচয় দিলে তার শ্বশুর—“দাতুমুখ খিঁচাইয়া সপ্তমে বলিলেন, “পাজি, বেটা জুয়াচোর ভাগো হিয়াসে। আভি ভাগো। ঘুরে ফিরে শেষে। আমার বাড়িতে এসেছে? শ্বশুর পাতাবার আর লোক পেলে না ? বেটা বদমায়েশ গুণ্ডা মহেন্দ্র ঘোষের বাড়ির ঘটনার কথা নলিনীর শ্বশুর শুনেছিলেন। নলিনী শেষ পর্যন্ত স্টেশনে ফিরে যায়। কিন্তু সরোজিনীর মা শুনে যখন বলে—“বেশত, কিন্তু তাতেই কি প্রমাণ হয়ে গেল যে সে জুয়াচোর ? দু-জনেরই এক নাম, – বাড়ি ভুল করে সেখানে গিয়ে ওঠাই কি আশ্চর্য নয় ?” এই যুক্তি শুনে মহেন্দ্রবাবু চুপ করে যান। কিন্তু কুণ্ডুবালা বলে— “ওগো সে নলিনী নয়—আমি তাকে দেখেছি। কারণ সে আগের নলিনীর সন্ধ্যে এই নলিনীকে মেলাতে পারে না। মহেন্দ্রবাবুই শেষ পর্যন্ত জিতে যান।কিন্তু সেই মুহূর্তে নলিনীর পাঠানো টেলিগ্রাম আসে। তখন মহেন্দ্রবাবু বুঝতে পারেন নলিনী সতি সত্যিই তাঁদের জামাই। মহেন্দ্রবাবু তখন গাড়োয়ানকে নিয়ে স্টেশনে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে মহেন্দ্রকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন। বাড়ির সবাই ভেবেছিল— “নলিনী এই ব্যাপার নিয়ে শালী, শালাকে ঠাটা করিয়া ঝাল মিটাইবে নলিনী ফিরে এসে এই প্রসঙ্গে কোনো কথাই তোলে না। এই ব্যাপারের জন্য শ্বশুর বাড়ির সবাই অনুতপ্ত সেটাই তার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। "একদিন কেবল অন্য প্রসঙ্গে মহেন্দ্র ঘোষ উকিলের কথা উঠিলে সে বলিয়াছিল—“যা হোক, পরের শ্বশুরবাড়িতে উঠে যে আদর যত্ন পেয়েছিলাম, – অনেকে সেরকম নিজের শ্বশুরবাড়িতে পায় না। মহেন্দ্র ঘোষের বাড়ির জামাই না হয়েই সে যে ব্যবহার এবং আদর তাঁর বাড়িতে পেয়েছিল এবং নিজের শ্বশুর বাড়িতে প্রথমে যে দুর্ব্যবহার পেয়েছিল সেই প্রসঙ্গেই উক্ত মন্তব্যটি নলিনী করেছিল।

২। হাস্যরসাত্মক গল্প হিসেবে প্রভাতকুমারে 'বলমান জামাতা গল্পটির সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর : হাসি মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'পঞ্চভূত' প্রবন্ধগ্রন্থে ‘কৌতুকহাস্যের মাত্রায় হাসির সম্বন্ধে বিভিন্ন কথা বলছেন। আর সুকুমার রায় বলেছেন “উঠছে হাসি ভসভসিয়ে সোডার মতো পেট থেকে যে মানুষ প্রাণখুলে হাসতে পারে না তাকে সুস্থ পদবাচ্যে তৃ ষিত করা যায় না। আসলে মানুষের কার্য, আচরণ এবং চরিত্র সম্পর্কে আমাদের একটা স্বীকৃত ধারণা বা সংস্কার থাকে। যখনই সেই ধারণা বা সংস্কারের ব্যতিক্রম দেখা যায় তখনই হাসি পায়। সাধারণত হাসির কয়েকটা শ্রেণির পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন— Wit, Satire, Irony. Humour. এই প্রসঙ্গে আমরা হাস্যরসাত্মক গল্প হিসেবে প্রভাত কুমারের 'বলবান জামাতা" গল্পটির সার্থকতা বিচার করব। 

গল্পটিতে দুই মহেন্দ্রবাবু অর্থাৎ মহেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহেন্দ্র ঘোষ এবং জামাই নলিনীকে কেন্দ্র করে গল্পে হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে। এলাহাবাদের কর্মরত মহেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে সরোজিনীর সঙ্গে কলকাতার আলিপুরের পোস্টমাস্টার নলিনীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর নলিনী কলকাতায় চলে আসে এবং মহেন্দ্র মুখোপাধ্যায় সরোজিনীকে নিয়ে সপরিবারে এলাহাবাদে কর্মক্ষেত্রে চলে যায়। বিয়ের দুই বছর নলিনীর সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় না শুধু স্ত্রীর সঙ্গে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান হতে থাকে। স্ত্রীর অনুরোধেই পূজার ছুটিতে আপিস থেকে ছুটি নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে রওনা হয়।

                নলিনীর মতো চেহারা তাহার

নলিনী যাহার নাম, কোমল কোমল কোমল অতি

                 যেমন কোমল, তেমনি বিকল

নলিনীর মতো চেহারা তাহার নলিনী যাহার নাম

এই কবিতা থেকে হাস্যরসের সন্ধান পাওয়া যায়। নলিনী ট্রেন থেকে নেমে কাউকে দেখতে না পেয়ে গাড়ি ভাড়া করে মহেন্দ্র উকিলের বাড়িতে নিয়ে যেতে বললে গাড়োয়ান ভুল করে তাকে মহেন্দ্র ঘোষ উকিলের বাড়িতে নিয়ে যায়। জামাই এসেছে শুনে বাড়িতে মহা ধুম পড়ে যায়, একটু বিশ্রাম নেবার পরে দাসী এসে একটা কয়েকমাসের শিশুকে তার কোলে দিয়ে যায়। নলিনী ভাবে কোনো আত্মীয়-সন্তান হবে। ঝির কাছ থেকে যখন শোনে সেটা তার ছেলে তখন সে ভাবে ছেলেটি কবে হল? “নলিনীর বুদ্ধিশুদ্ধি ইতিপূর্বেই যথেষ্ট গোলমাল হইয়া গিয়াছিল শেষের এই কথা শুনিয়া সে একেবারে দিশাহারা হইয়া পড়িল।" তার এই কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হতাশ অবস্থা দেখে মনে হাসির উদ্রেক হয়।

জলখাবারের সময় মহেন্দ্র ঘোষের মেজ মেয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে এলে জানা যায় নলিনী। সেই বাড়ির জামাই শরৎ নয়। তখন সবাই নলিনীকে ভাবে জোচ্চর, জুয়াচোর। বাড়িতে হুলুস্থুল পড়ে যায়। “এই সময়ের মধ্যে, অদূরস্থিত একটি পুস্তকের আলমারির প্রতি নলিনীর দৃষ্টি পড়িয়াছিল। সারি সারি বাঁধানো রিপোর্ট : প্রত্যেকখানির নিম্নে সোনার জলে নাম লেখা—এম. এন. ঘোষ।" নলিনী তখন ভুলটা বুঝতে পারে।" তার শ্বশুরের নাম মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনি মহেন্দ্রনাথ ঘোষ। সে ভ্রমক্রমে অন্য লোকের শ্বশুর বাড়িতে চড়াও হয়েছে।" এই ভ্রান্তি হাস্যরসের সৃষ্টি করে।

জামাই বিভ্রাটের কথা রামশরণ মহেন্দ্র ঘোষকে খবর দিতে গিয়ে বলে- “ বাড়িমে একঠো ডাকু হোবে কি জুয়াচোর হোবে কি পাগল আমি হোবে কিছু ঠিকানা নাই। সে বলে কি হামি বাবুর দামাদ আছি !" এই আশ্চর্যজনক কথা শুনে তাসখেলার অন্য সদস্যরা হেসেছে কিন্তু মহেন্দ্ৰ ঘোষ হস্ত-দস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। নলিনী মহেন্দ্রবাবুর কথা বলে – “আমার নাম নলিনীকান্ত মুখোপাধ্যায়। আমি মহেন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের জামাতা। মহেন্দ্রবাবু উকীলের বাড়ি গাড়োয়ানকে বলেছিলাম, সে আমাকে এখানে এনে ফেলেছে " এই কথা শুনে — “মহেন্দ্র ঘোষের রাগ জল হইয়া গেল। তিনি নলিনীর হাত দু'খানি নিজ হস্তে ধারণ করিয়া হো হো শব্দে অনেকক্ষণ হাস্য করিলেন। একই নাম নিয়ে 'ভ্রান্তিবিলাস'-এর মতো অবস্থার সৃষ্টি হাস্যরসাত্মক হয়ে উঠেছে।

এরপর নলিনী যখন তার আসল শ্বশুরবাড়ি আসে তখন তার শ্বশুর "পাজি, বেটা জুয়াচোর ভাগো........... বেটা বদমায়েস গুণ্ডা বলে" বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। সে যখন বলেছে সে এই বাড়ির জামাই তখন তার শ্বশুর বলেছেন—“ বেটা জুয়াচোর! তুমি শ্বশুর চেন আর আমি জামাই চিনিনে ? আমার জামাইয়ের এরকম গুণ্ডার মতো চেহারা ? - ভাগো হিয়াসে—নিকালো হিয়াসে— নয়ত আভি পুলিশমে ভেজেলো—”। শরীর চর্চা করে শালির ব্যঙ্গর জবাবে তার যা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা যথার্থই হাস্যরসাত্মক। অবশেষে নলিনীর পূর্ব পাঠানো টেলিগ্রামের সাহায্যে সমস্ত রহস্যের সমাধান হয়। তাই সে বলেছে— “যা হোক, পরের শ্বশুর বাড়িতে উঠে যে আদর যত্ন পেয়েছিলাম, অনেকে সেরকম নিজের শ্বশুরবাড়িতে পায় না"

পরিশেষে বলা যায় প্রভাতকুমার শুধুই হাসির গল্প লেখেননি, কিন্তু হাসির গল্পের জন্যই তাঁর খ্যাতি সর্বাধিক। আবার এই হাসির গল্পের জন্যই তিনি কখনো নিন্দিত, কখনো সমালোচিত “রবীন্দ্রনাথের মতো প্রভাতকুমারও জীবনকে দেখেছিলেন সহজভাবে, কিন্তু তাঁহার সে দেখা নিতান্তই সহজ সরল, সে দৃষ্টি তলায় নামে না, ওপরে খুশির আলোক....... সে চোখে মনের রং যেটুকু লাগিয়াছে তাহা কৌতুকের ও তৃপ্তির। গভীর সংবেদনা এবং ইমোশন তাহাতে সর্বদা স্পষ্ট নয় আর সুকুমার সেন, 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস'- –এ বলেছেন—“প্রভাতকুমারের দৃষ্টি কৌতূহলী.... সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য গল্পগুলির প্লট বিরচিত ।" তাই বলা যায় হাস্যরসাত্মক গল্প হিসাবে "বলবান জামাতা সার্থক।

অথবা, বলবান জামাতা গল্পে বাঙালির পারিবারিক জীবনের যে ছবি ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও 
অথবা, 'কৌতুকরসের প্রাচুর্য সত্ত্বেও বলবান জামাতা গল্পের বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়ে যায়নি তা আলোচনা করো।

উত্তর : গল্প শুরু পূর্ব ঘটনার পর হতে, যদিও পূর্ব ঘটনা দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ফ্লাশব্যাক পদ্ধতিতে ব্যক্ত হয়েছে। ঘটনাক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের ঘটনাই প্রথম ঘটনা। এই ঘটনা পর্যায়ে আলিপুরের পোস্টমাস্টার নলিনীবাবুর বিবাহ, মেজদি শ্রীমতী কুণ্ডুবালা দেবীর পরিচয় ও নলিনীবাবুর নন্দদুলাল মার্কা শরীরের প্রতি কটাক্ষ এবং বিবাহের পরে নলিনীবাবুর একাকী আলিপুরে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পরিচ্ছেদের দৃশ্য প্রথম ঘটনার দুই বৎসর পর। ঘটনাক্রমের এই পরিবর্তনের মূল কারণ হল বর্তমান গল্পটির আখ্যান ভাগ শুরু হয়েছে সরোজিনী অর্থাৎ নলিনীবাবুর স্ত্রীর পত্রপ্রাপ্তির পর। সরোজিনীর পত্রে দিনাজপুরের মেজদির সংবাদ আছে। নলিনীবাবুর প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাত্রার আগ্রহের পশ্চাতে আছে দীর্ঘ বিরহের পর স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ নয়, মেজদির সঙ্গে মোলাকাত। আপাতঃদৃষ্টিতে এই আগ্রহ বিসদৃশ মনে হতে পারে, কিন্তু এরই ওপরে দাঁড়িয়ে আছে গল্পটির কৌতুক রস বা পরিণতি পর্যায়ে উন্নীত। পাঠক মনে কৌতূহল সৃষ্টি করেই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে সেই কৌতূহলের অবসান ঘটিয়েছেন। নলিনীবাবুর আগ্রহ মেজদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। এর পিছনে রয়েছে এক মধুর প্রতিশোধ স্পৃহা। নলিনীবাবুর নন্দদুলাল মার্কা শরীর নিয়ে মেজদির শ্লেষবাক্য নলিনীবাবু বুঝতে পারেননি। তিনি নিজেকে পরিবর্তিত করেছেন, পুরুষোচিত দৃঢ় করেছেন। তাঁর শরীর। দুবছর সময় লেগেছে টেরোগাল, নবনীতোপম হাত পা ও প্রকোষ্ঠদেশের কোমল অস্থিগুলিকে দৃঢ় ও কঠিন করার সাধনায়। ডাম্বেল করেছেন, দুবেলা ব্যায়াম করেছেন, নিরামিষ খাদ্য বর্জ্জন করে আমিষ খাদ্য ব্যবহার করেছেন। এ এক কঠিন সাধনার অধ্যায়। এইভাবেই বাঙালি নলিনীবাবু বদলে গেছেন, হয়েছেন বাঙালি পাঞ্জাবি যুবক। দাড়ি রেখেছেন, বহুকাদি ব্যবহার করে শিকারে অভ্যস্ত হয়েছেন।

নলিনীবাবুর প্রতি মেজদির শ্লেষবাক্য নলিনীবাবুকে তীব্র আঘাত দিয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। সুন্দরী মহিলা এবং সম্পর্কে শ্যালিকার কাছ হতে পাওয়া এই শ্লেষবাক্যে তিনি প্রথম কিছুদিন নিদারুণ হীনমন্যতায় ভুগেছেন। এই হীনমন্যতা হতে তিনি মুক্তি চেয়েছেন এবং পেয়েছেনও। তাই কুঞ্জুবালার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে। পাঠকমনে কৌতুহলের অবসান ঘটেছে সামায়িকভাবে, কিন্তু তৃতীয় পরিচ্ছেদেই কৌতুককর এক কৌতূহল পাঠককে তাড়া করে নিয়ে গেছে অস্তিম পর্বে। সুতরাং দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ প্রথম পরিচ্ছেদের ফ্লাশব্যাক পরিচিত। এটা যদিও ঘটনা কিন্তু তা গল্পের ঘটনা নয়। 

হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। নলিনী মহেন্দ্রবাবুর কথা বলে – “আমার নাম নলিনীকান্ত মুখোপাধ্যায়। আমি মহেন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের জামাতা। মহেন্দ্রবাবু উকীলের বাড়ি গাড়োয়ানকে বলেছিলাম, সে আমাকে এখানে এনে ফেলেছে " এই কথা শুনে — “মহেন্দ্র ঘোষের রাগ জল হইয়া গেল। তিনি নলিনীর হাত দু'খানি নিজ হস্তে ধারণ করিয়া হো হো শব্দে অনেকক্ষণ হাস্য করিলেন। একই নাম নিয়ে 'ভ্রান্তিবিলাস'-এর মতো অবস্থার সৃষ্টি হাস্যরসাত্মক হয়ে উঠেছে। এরপর নলিনী যখন তার আসল শ্বশুরবাড়ি আসে তখন তার শ্বশুর "পাজি, বেটা জুয়াচোর ভাগো........... বেটা বদমায়েস গুণ্ডা বলে" বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। সে যখন বলেছে সে এই বাড়ির জামাই তখন তার শ্বশুর বলেছেন—“ বেটা জুয়াচোর! তুমি শ্বশুর চেন আর আমি জামাই চিনিনে ? আমার জামাইয়ের এরকম গুণ্ডার মতো চেহারা ? - ভাগো হিয়াসে—নিকালো হিয়াসে— নয়ত আভি পুলিশমে ভেজেলো—”। শরীর চর্চা করে শালির ব্যঙ্গর জবাবে তার যা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা যথার্থই হাস্যরসাত্মক। অবশেষে নলিনীর পূর্ব পাঠানো টেলিগ্রামের সাহায্যে সমস্ত রহস্যের সমাধান হয়। তাই সে বলেছে— “যা হোক, পরের শ্বশুর বাড়িতে উঠে যে আদর যত্ন পেয়েছিলাম, অনেকে সেরকম নিজের শ্বশুরবাড়িতে পায় না ।পরিশেষে বলা যায় প্রভাতকুমার শুধুই হাসির গল্প লেখেননি, কিন্তু হাসির গল্পের জন্যই তাঁর খ্যাতি সর্বাধিক। আবার এই হাসির গল্পের জন্যই তিনি কখনো নিন্দিত, কখনো সমালোচিত “রবীন্দ্রনাথের মতো প্রভাতকুমারও জীবনকে দেখেছিলেন সহজভাবে, কিন্তু তাঁহার সে দেখা নিতান্তই সহজ সরল, সে দৃষ্টি তলায় নামে না, ওপরে খুশির আলোক....... সে চোখে মনের রং যেটুকু লাগিয়াছে তাহা কৌতুকের ও তৃপ্তির। গভীর সংবেদনা এবং ইমোশন তাহাতে সর্বদা স্পষ্ট নয় আর সুকুমার সেন, 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস'- –এ বলেছেন—“প্রভাতকুমারের দৃষ্টি কৌতূহলী.... সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য গল্পগুলির প্লট বিরচিত ।" তাই বলা যায় হাস্যরসাত্মক গল্প হিসাবে "বলবান জামাতা সার্থক।

তৃতীয় পরিচ্ছেদকে বলা যায় "The comedy of errors' যুগল অ্যান্টিকোলাস ও যুগল ডোমিও কে নিয়ে শেকসপীয়রের জমজমাট হাস্যমুখর কাহিনির আভাস রয়েছে এ গল্পের তৃতীয় পরিচ্ছেদে। এলাহাবাদের একই নামের দুই উকিলের অবস্থান ঘটিয়ে এবং ভুলক্রমে মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাড়ির পরিবর্তে মহেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়িতে নলিনীবাবুকে এনে গল্পকার কৌতূকের এক নতুন দৃশ্যের পরিবেশন করেছেন। দুই মহেন্দ্রবাবুই যেহেতু উকিল এবং নলিনীবাবু শুধু মহেন্দ্রনাথ উকিলের নাম বলায় গাড়োয়ান তাঁকে মহেন্দ্রনাথ ঘোষের বাড়িতে এনে তুলেছে। খুবই মুন্সীয়ানার সঙ্গে তিনি এই ঘটনাটি পরিবেশন করেছেন। এলাহাবাদের শ্বশুর বাড়িতে নলিনীবাবু এই প্রথম আসছেন। সুতরাং মহেন্দ্রনাথ ঘোষ ও মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পার্থক্য তাঁর জানার কথা নয়। ঘোষ মহাশয়ের বাড়ির চাকর রামশরণও নলিনীবাবুকে এই প্রথম দেখছে। জামাই পরিচয় পেয়ে সে নলিনীবাবুকে যথাযথ আপ্যায়ন করেছে। স্নানাদি সারার পর দাসী এনেছে একজন নবজাতককে কোলে নিয়ে। দাসীর কথা বা ইঙ্গিত নলিনীবাবু প্রথমটায় বুঝতে পারেননি। ভেবেছেন এই পরিবারের অন্য কারও সম্ভান। তিনি নিজে জানেন যে এ সন্তান তাঁর হতেই পারে না। মনে মনে স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হন। কার সন্তান সে কথা পরে জানানো উচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত ভেবেছেন এটাও একটা জামাই ঠকানো ব্যাপার। কিন্তু হাস্য সংবরণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে যখন তথা কথিত মেজদির আগমন ঘটে। “কি ভাই, এতদিনে মনে পড়ল" বলে মেজদির প্রবেশ, এর পরেই চারিচক্ষের মিলন এবং একালা ঘোমটা দিয়ে মেজদির দ্রুত প্রস্থান। নলিনী কুবালাকে চিনতেন। এখন দেখলেন যে তিনি কুণ্ডুবালা নন অন্দর মহল থেকে মেয়েদের কথাবার্তা কানে আসছে। "ওমা একি কাণ্ড। জামাই সেজে কে এল ?”- রামশরণকে পাঠানো হন উকিলবাবুকে খবর পাঠাতে। জল খাবার খেতে খেতে নলিনী একটু চঞ্চল। হঠাৎ লক্ষ্য পড়ে যায় সারি সারি সাজানো ল-রিপোর্টে। প্রত্যেকটিতে সোনার জলে নাম লেখা এম. এন ঘোষ। নলিনীর ভাবনা চিন্তা দূর হল। অন্দর মহলে যতখানি উদ্বেগ, বাইরের ঘরে নলিনী ঠিক ততখানিই নিরুদ্বেগে জল খাবারের পাত্র খালি করে ফেলল।

নিজের শ্বশুর বাড়ি ভেবে অপরের বাড়ি চড়াও হওয়া, নবজাতকের বিষয় নিয়ে হাস্য পরিহাস এবং নলিনীর মানসিক সিদ্ধান্ত, বালখিল্যদের জ্ঞানীবৎ আচরণ, মেজদির আগমন এবং ভূত দেখার মতো সভয়ে প্রস্থান, অন্দর মহলের ভীতি বিহ্বলতা এবং নলিনীর রহস্যভেদও নিশ্চিন্ত মনে খাদ্য গ্রহণে হাস্যরসের অবতারণা ঘটনা পরম্পরায় দৃঢ় সন্নিধ্য এবং কৌতুক রসের জীবনে গভীরভাবে জারিত। ঘটনা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে চতুর্থ পরিচ্ছেদে। রামশরণ গেছে কেদারবাবুর বাড়িতে মহেন্দ্র ঘোষ মশাইকে খবর দিতে। ঘোষ মশাই-এর প্রশ্নের উত্তরে রামশরণ জানিয়েছে, 'ডাকু হোবে কি জুয়াচোর হোবে কি পাগল আদমি হোবে কিছু ঠিকানা নাই। সে বলে কি আমি বাবুর দামাদ আছি? মহেন্দ্রনাথ ঘোষ প্রস্থান করেছেন। প্রবীণ উকিলদের মধ্যে পাগল না গুণ্ডা এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ বা আবার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশে হ্যান্ডওভার করে দিতে। নক্ষত্রবেগে গাড়ি এসে থামল। লাফিয়ে নামলেন প্রবীণ উকিল বললেন কই কোথায়? খুবই তুঙ্গী অবস্থা, কি জানি কি হয়। এই বুঝি ঘটে যায় ভীষণ বিপর্যয়। ভয়ঙ্কর উদ্বেগ প্রায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। কিন্তু হঠাৎই ফেটে যায় উদ্বেগের বেলুন। হাসির তুবড়ি ফেটে যায় । নলিনী বেরিয়ে এসে পরিচয় দেয়, ভ্রান্তি ও ভ্রান্তি অপনোদনের কারণ ব্যাখ্যা করে। মহেন্দ্রবাবু নলিনীর হাত দুটি জড়িয়ে ধরে হো হো করে হেসে ওঠেন। পাঠকও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হাসিতে যোগ দেয়।পঞ্চম পরিচ্ছেদের ঘটনার মধ্যে তীব্রতা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের শ্বশুর বাড়িতে এসে নলিনী যখন পৌঁছালেন, মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তার কিছুটা পূর্বেই ফিরে এসেছেন। মহেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে জামাই সেজে জুয়াচোর বা ডাকাত এসেছে এখবর তিনি জেনেই এসেছেন। আলবোলার নল মুখে দিয়ে হয়তো সে-কথাই ভাবছিলেন। এমন সময় নলিনীর কথা তাঁর কানে গেল। 'বলবাবুর জামাই এসেছেন। যণ্ডামার্কা চেহারা, কাঁধে বন্দুক, হাতে লাঠি। আর যায় কোথা? অগ্নিতে ঘৃতাহুতি হল। হুঙ্কার দিয়ে তিনি তেড়ে এলেন, বললেন, “পাজি, বেটা জুয়াচোর—ভাগো হিয়াসে। আভিভাগো। ঘুরে ঘুরে শেষ আমার বাড়িতে এসেছ ? শ্বশুর পাতাবার আর লোক পেলে না? বেটা বদমায়েস গুন্ডা" প্রকৃত শ্বশুর বাড়িতে এবং প্রকৃত শ্বশুরের কাছ হতে এরকম ব্যবহার পাবার আশা কেউ করে না, নলিনীও করেননি। কেদারবাবুর বৈঠকখানার ঘটনাও তার অজ্ঞাত। সুতরাং মহেন্দ্রবাবুর এহেন বিসদৃশ আচরণের কারণ বুঝতে না পেরে এসময়ে নলিনীর মুখের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বিস্ময়ের আধিক্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। বিস্ময়, ক্ষোভ, অপমানের ক্রমান্তর আবর্তনে দিশেহারা অবস্থাতেই নলিনী দেখতে পেল যে, মহেন্দ্রবাবুর আদেশে দারোয়ান ও বাড়ির ভৃত্যেরা লাঠি নিয়ে তাকে আক্রমণে উদ্যত। আর সময় নেই। ঘটনার পরিণতি ক্লাইম্যাক্সে উত্তীর্ণ। আত্মরক্ষার প্রচেষ্টায় নলিনীর দিশেহারা অবস্থা অন্তর্হিত হয়। বৃহৎ যষ্টি মাথার ওপর ঘুরিয়ে বলেন।

'খবরদার। হাম চলা যাতা হ্যায়। লেকেন যো হামকো ছুয়েগা, উসকা হাড্ডি হাম চুর চুর করকে ডালোে।"তবুও যাওয়ার সময় একবার শেষচেষ্টা। কিন্তু অগ্নিশর্মা মহেন্দ্রবাবু কিছুতেই নমণীয় নন। বললেন, 'বেটা জুয়াচোর। তুমি শ্বশুর চেন আর আমি জামাই চিনিনে। আমার জামাই-এর এরকম গুণ্ডার মতো চেহারা? ভাগো হিয়াসে—নিকলো হিয়াসে—নয়তো আভি পুলিশ মে ভেজে গা .... এই পরিচ্ছেদে নাট্যগুণ চরম উৎকর্ষতা প্রাপ্ত হয়েছে। সংঘাত সম্পূর্ণ নাটকীয় যদিও তা চরিত্রগত নয়। ঘটনার পারম্পর্যে এই নাটকীয় সংঘাত কৌতুক ও হাস্যরসের আবহ সৃষ্টি করেছে। এখানে কোন্ tragic sence নেই, কোন্ চরিত্রে হ্যামারসিয়া কার্যকরী নয়। যা কিছু ঘটেছে ঘটনা পরম্পরায়। সবটাই ভ্রান্তি শরতের শূন্য গর্ভ মেঘে সত্য ঢাকা পড়েছে। এসবই সাময়িক। শূন্যগর্ভ মেঘের প্রস্থানের সে সঙ্গে প্রকৃত সত্য উদ্ভাসিত হবে। নলিনীর প্রস্থানেও তাই কোনোরকম sense of waste-এর উদ্ভব ঘটেনি। লঘু তরল হাস্যের মধ্যদিয়ে দৃশ্যান্তর ঘটেছে। এরপরই আর বৃথা চেষ্টা না করে নলিনী স্টেশনে ফিরে গেছে। এই গল্পের শেষ পরিচ্ছেদে মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বাড়িতে অন্দর মহলে হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে। পূর্ববর্তী ঘটনার জের টেনে পারস্পরিক দোষারোপ এবং এরমধ্য দিয়েই নলিনীর টেলিগ্রাম সমস্ত জটিলতার অবসান ঘটিয়েছে। গৃহিণী কর্তীর প্রতি দোষারোপ করে বলেছেন, মদ খেয়েছ না কি ? জামাইকে তাড়ালে ? জামাই-এর আসার কথা ছিল, সুতরাং কেউ যদি এসে থাকে, তবে সে নিশ্চয় জামাই। গৃহিণীর এইযুক্তি উকিল মহেন্দ্রবাবু মানতে নারাজ। মামলায় আসামী পক্ষের হার নিশ্চিত জেনেও, আসামী পক্ষের উকিল যেমন ভাবে তর্কের জের টেনে বলেন, মহেন্দ্রবাবুর নিজের অবস্থাটা প্রায় সেরকম। বিদুষী কন্যা ও মেজদি কুণ্ডুবালার সাক্ষ্য মহেন্দ্রবাবুর পায়ের তলার মাটি কিঞ্চিৎ শক্ত করলেও তা স্থায়ী হয়নি। ক্ষুদ্র চারি আনার টেলিগ্রাম মহেন্দ্রবাবুকে ধরাশয়ী করেছে। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। লাঠি, বন্দুক ও ষণ্ডামার্কা চেহারা দেখেই পূর্ব ঘটনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করেছেন। এখন জামাইকে স্টেশন হতে ফিরিয়ে আনা ছাড়া উপায় নেই। মহেন্দ্রবাবুর দ্রুত প্রস্থান করেছেন নলিনীকে ফিরিয়ে আনতে। গল্প এখানেই শেষ। কিন্তু গল্পকার আরও কিছু তথ্য দিয়ে গল্পটিকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছেন।

৫। বলবান জামাতা গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর :  গল্পের মুখ্য চরিত্র বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের নামে এ গল্পের নামকরণ হয়নি। নলিনাই এ গল্পের মুখ্যচরিত্র। তাকে কেন্দ্র করেই ঘটনার পর ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। প্রথম পরিচ্ছেদে নলিনীর টেলিফোনে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার পর হতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার কেন্দ্রে আছে নলিনী। তাই নলিনীর নাম অনুসারে এ গল্পের নামকরণ করার একটা প্রবণতা বিদ্যামান ছিল। কিন্তু গল্পকার এই মত গ্রহণ করেননি। না করার কারণ হল এ গল্পের নায়ক ঠিক নলিনী নয়। ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সব চরিত্রই এই উপাদান রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। সমস্ত গল্পে যে ভ্রান্তি আছে, তা নলিনীর পরিবর্তিত রূপকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। এখানে ঘটনাই মুখ্য হলেও সেই ঘটনাকে কোনো চরিত্রই সৃষ্টি বা নিয়ন্ত্রণ করেনি। কোনো চরিত্রের বিশেষ প্রবণতা ঘটনাগুলির নিয়ন্ত্রণ করেনি। কারও Error of Judgment-এর ফলশ্রুতি রূপে ঘটনা ঘটেনি। নলিনীকে কেন্দ্র করে ঘটনা আবর্তিত হলেও, ঘটনার নিয়ন্ত্রণে তার কোনো হাত নেই, পক্ষান্তরে সে ঘটনার শিকারে পরিণত হয়েছে। নলিনী ভ্রান্তির অসহায় পাত্রে পরিণত হয়েছে। দুই মহেন্দ্রনাথ হাস্যরস সৃষ্টির উপাদান। এমনকি কুঞ্ঝবালার নিদারুণ শ্লে এগল্পের মুখ্য উপাদান হলেও কুঞ্জুবালা ঘটনার আবর্তনে অনুপস্থিত থেকেছে। একের পর এক ঘটনার বিন্যাসই যেহেতু এ গল্পের মুখ্য আঙ্গিক, তাই নামকরণের ইঙ্গিত তার মধ্যে হতে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ গল্পের মুখ্য বিষয় হল নলিনীর নন্দদুলাল মার্কা মেদবহুল ও ভুঁড়ি সম্পন্ন দেহ কাঠামোর পরিবর্তন। দু'বছর ধরে নিরলস সাধনায় সে বলশালী যুবকে পরিণত হয়েছে। দুধেভাতে পরিপুষ্ট ননীর পুতুলের বলশালী পাঞ্জাবি যুবকের মতো দেহ সৌষ্ঠবই ঘটনার মুখ্য নিয়ন্ত্রক। নলিনীকে কেউই সনাক্ত করতে পারেনি, এমনকি মেজদিও নয়। সকলের কাছেই এই বলবান যুবক অপরিচিত 'গুন্ডা' বদমায়েস জুয়াচোর-এ পরিণত হয়েছে। সর্বশেষে নলিনী প্রেরিত টেলিগ্রামই সমস্যার সমাধান করেছে। বলবান যুবক বলবান জামাতা রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। এইদিক থেকে বিচার করলে নামকরণটি সার্থক হয়েছে। কেননা নলিনীর বলবান দেহ কাঠামোই এ গল্পের মুখ্য নিয়ন্ত্রক। হাস্যরস সৃষ্টিই গল্পের মূল উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণরূপ দিতে গল্পটিতে নাট্যরসের সন্ধ্যার করা হয়েছে। গল্পটির প্রথম দৃশ্যেই রয়েছে নাটকীয় উপস্থাপনা। আলিপুর পোস্টাপিসে একাকি পোস্টমাস্টার টেলিফোনে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আশায় উদ্বিগ্ন মুখে অপেক্ষা করছেন। টেলিফোন আর আসে না। হঠাৎ বেলা চারটার সময় ফোন বেজে ওঠে। অপমানিত হয়ে নলিনী টেলিফোনের নল মুখে দিয়ে বললেন 'yes'। কিন্তু আশায় উদ্বেলিত হওয়া মন বিমর্থের অন্ধকারে ঢাকা পড়ল। উদ্বিগ্নতা আবার ফিরে এল মুখমণ্ডলে। সময় কাটাবার জন্যে এবং মনের উদ্বেগকে প্রশমিত করার জন্যে পকেট হতে স্ত্রীর পত্রটি বের করে পড়তে থাকলেন। পত্র পাঠ করে তা পকেটে রাখলেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন—প্রায় পাঁচটা বাজে। মৃদু দীর্ঘশ্বাস। নিজের মনকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। আজ সবে চতুর্থী। কালও যদি ছুটি মঞ্জুর হয়, তবে তিনি পঞ্চমীর দিনেই বেরিয়ে পড়তে পারবেন। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার ঘর ছুই ছুই। অবার টেলিফোন। নলিনী বললেন 'yes'। ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আনন্দ মুখের অভিব্যক্তিতের ফুটে উঠল। ‘ছুটি-ছুটি। নলিনী ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, ডেপুটি পোস্টমাস্টারকে চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে আজই রওনা হওয়ার জন্যে।

প্রথম পরিচ্ছেদের দৃশ্যটির উপস্থাপনা করা হয়েছে পরিপূর্ণ নাটকীয় পরিবেশে। নলিনীর উত প্রবোধ, আশা নিরাশার দ্বন্দ্ব এবং শেষ মুহূর্তে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আনন্দ সবটাই সংলাপহীন অভিব্যক্তি এর পরেই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আছে ফ্লাশব্যাক পদ্ধতিতে দু'বছর আগের বিবাহ সভার দৃশ্য। নাদুস নুদুস নন্দদুলাল মার্কা চেহারার বড়ো ভুঁড়ি উচিয়ে দণ্ডায়মান। ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিতা সুলেখিকা আধুনিকা তরুণী শ্যালিকা মেজদির বিদ্রুপের কশাঘাতে সজোরে যেন পিঠের ওপর আছড়ে পড়ল। এর পরেই আলিপুর বাসার দৃশ্য। ডাম্বেলাদি সহযোগে কলরস্তর প্রচেষ্টা চলেছে শরীরের কাঠামোটা বদলে ফেলতে। দু বছরের সাধনায় ভুঁড়ি অদৃশ্য হল, মেদ খসে পড়ল। চর্বি শুকিয়ে গেল। শরীর হয়ে উঠল শক্তপোক্ত ও পেশি সমন্বিত। পাঞ্জাবিদের মতো দাড়ি রেখে ও পাগড়ি পরে নন্দদুলাল নলিনী হয়ে উঠলেন বলবান পাঞ্জাবিদের মতো শক্তিধর যুবা।

এরপরের দৃশ্য এলাহাবাদে মহেন্দ্রনাথ ঘোষ উকিলের বাড়ি। গাড়োয়ান ভুল করে তাকে মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বাড়ির পরিবর্তে মহেন্দ্রনাথ ঘোষ-এর বাড়িতে এনে তুলেছে। বাড়ির কর্তা তখন বাড়ি নেই। চাকর রামশরণ তাকে আপ্যায়ন করে বাইরের ঘরে বসিয়েছে। স্নানের জল দেওয়া হয়েছে। স্নানাদি সেরে বালখিল্য বাহিনীর হাত থেকে বহুকাদি সযত্নে সারিতে রাখতেই ঝি এসেছে ছেলে নিয়ে। এরপরেই হাস্যরস জমে উঠেছে। নলিনী জানে যে এ ছেলে পরিবারের অন্য কোনোজনের, কিন্তু ঝি'র কথাবার্তায় হেঁয়ালী। রূপার টাকা দিয়ে মুখ দেখাতে ঝি'র আপত্তি। নলিনী মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়েছে স্ত্রীর ওপর। নাছোড়বান্দা ঝি তাকে জানিয়েছে 'ছেলের বাপ হলেই হয় না'। বালখিল্যদের হাসি, ঝি'র রসিকতা, দু বছর শ্বশুরবাড়ি না আসা সত্ত্বেও সদ্যজাত সন্তানের পিতা হওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত, ঘর্মসিক্ত নলিনীকে দেওয়া হল লবন জল সরবত এর পরিবর্তে। নলিনী সমস্যার মীমাংসার উপনীত হল। এটাও একটা জামাই ঠকানোর ব্যাপার। এর পরেই জলযোগ । মনের ঝুমঝুম শব্দ। একজন বলে গেল মেজদি আসছেন। নলিনী হাতের আস্তিন ওঠালেন, যাতে তার পেশি বহুল হস্ত কুণ্ডুবালার চোখে পড়ে যুবতী এল, চারি চক্ষের মিলন এবং তৎক্ষণাৎ একগলা ঘোমটা টেনে প্রস্থান। ভিতরে নারীকন্ঠের বিস্ময় ভীতি এবং বাবুকে খবর দেওয়ার জন্য রামশরণকে প্রেরণ। সবই নেপথ্যে ঘটেছে, কিন্তু তাদের কথাবার্তা, বিস্ময় ও ভীতি সবই জ্ঞাতি গোচর। নলিনীর মুখেও বিস্ময়। হঠাৎ নজরে পড়ে সোনার জলে নাম লেখা 'ল' রিপোর্টের ওপর। সমস্যার সমাধান হয়। নলিনীর মুখে ঈষৎ হাস্য, এর পরই মনোযোগ দিয়ে জল খাবারের থালা খালি করে ফেলাও সাঙ্গ হয়। এর পরেই দৃশ্য কেদার বাবুর বৈঠকখানা। পাশার আড্ডা জমজমাট বড়ো ছোটো-দুই-মহেন্দ্রবাবুই হাজির। ভীত সন্ত্রস্ত রামশরণের প্রবেশ, ডাকু আসার সংবাদ প্রদান এবং প্রবীণ মহেন্দ্রনাথ ঘোষের লক্ষ দিয়ে গাড়িতে ওঠা ও প্রস্থান এবং ছোটো মহেন্দ্রবাবুর উপদেশ একের পর এক নাট্য দৃশ্যের মতোই ঘটে গেছে। দৃশ্য বদলায়। মহেন্দ্রনাথের গাড়ি এসে থামে প্রাণে। লাফিয়ে নামলেন ভাবটা রণংদেহী গোছের। নলিনীর কক্ষ হতে বেরিয়ে এল। মহেন্দ্রবাবুর কাছে আত্মপরিচয় দিতেই নলিনীর হাত ধরে প্রবীণ মহেন্দ্রবাবুর আপ্যায়ন। দৃশ্যান্তরে দেখা যায় মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তামাক খাচ্ছেন। বাইরে একটা গাড়ি এসে থামল। নলিনী নেমে সত্যদের 'জামাই' এসেছে বলে ভৃত্যদের খবর দিতে বলল। মার মার করতে বেরিয়ে এলেন মহেন্দ্র নাথ। 'মারকে নিকাল দেও। গর্দান পাকড়কে নিকাল দেও? ভূতারা নিয়ে ঘরে ধরল নলিনীকে। নলিনী আত্মরক্ষার তাগিদে মাথার ওপর লাঠি ঘুরিয়ে আক্রমণকারীদের সাধনার করে দিয়ে মহেন্দ্রবাবুকে বলল, আপনি ভুল করছেন। আমি আপনার জামাই নলিনী। কিন্তু মহেন্দ্রবাবুর এক কথা—'বেটা জুয়াচোর। তুমি শ্বশুর চেন আর আমি জামাই চিনিনে। উপায়ান্তর না দেখেই নলিনী ফিরে যায় স্টেশনে। শেষ দৃশ্যের স্থান মহেন্দ্র বাবুর অন্দরমহল। গৃহিণীর সঙ্গে প্রবল বিতর্ক। গৃহিণীর যুক্তির জালে মহেন্দ্রবাবু যখন প্রায় ধরাশায়ী, তখনি মেজদি অর্থাৎ কুলূবালার সাক্ষ্য মহেন্দ্রবাবুকে কিছুটা উজ্জীবিত করলেও টেলিগ্রামের উপস্থিতি সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। মহেন্দ্রবাবু স্টেশনে ছুটেছেন জামাইকে ফেরাতে। ফিরিয়েও এনেছেন। সমগ্র গল্পটির নাটকীয় বিন্যাস দৃশ্যের পর দৃশ্য সম্বলিত হয়ে এক মিলনান্তক পরিণতি লাভ করেছে। গল্পটির নাট্যরূপ প্রভাতবাবু নিজেই লিখেছেন গয়ার নাট্য সমাজের অনুরোধে। তাঁর নিজের বাড়িতে পৌত্রের অন্নপ্রাশনেও নাটকটি অভিনীত হয়। চিত্তরঞ্জন গোস্বামীর একক অভিনয়ে 'বলবান জামাতার কৌতুকাভিনয়ে তদানীন্তন সময়ে খুবই প্রসিদ্ধ হয়েছিল। 'গ্রহের ফের' শিরোনামে গল্পটি নাট্য রূপায়িত দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চে হাসির খোরাক জুগিয়েছে। দৃশ্যাবলীর সংলাপ সবই প্রায় নাট্য গুণসম্পন্ন হওয়ায় হাস্যরসের নাটকরূপে 'বলবান জামাতা' বা 'গ্রহের ফের মধ্যসফল। 


আরোও নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের পেজ : future Success follow করুন ।

Post a Comment

0 Comments