Type Here to Get Search Results !

নবম শ্রেণী বাংলা রাধারানী গল্পের সাজেশন ২০২২ | রাধারানী গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২



নবম শ্রেণী রাধারানী গল্প | রাধারানী গল্পের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | রাধারানী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২ |রাধারানী গল্পের সাজেশন ২০২২ 

1. রাধারাণী কোথায় গিয়েছিল ?

উত্তর: রাধারাণী মাহেশে রথ দেখতে গিয়েছিল।

2. “... বিধবা হাইকোর্টে হারিল।” –এখানে কোন্ মামলার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: জ্ঞাতির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে রাধারাণীর মায়ের যে মামলা হয়েছিল এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।

3. হাইকোর্টে মামলায় হেরে যাওয়ার ফলে রাধারাণীদের কী অবস্থা হয়েছিল?

উত্তর: হাইকোর্টে হেরে যাওয়ার ফলে ডিক্রি জারি করে রাধারাণীদের ভদ্রাসন থেকে উৎখাত করা হয়।

4. হাইকোর্টে হেরে যাওয়ার পরে রাধারাণীদের দিন কীভাবে কাটত?

উত্তর: হাইকোর্টে হেরে গিয়ে বাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে রাধারাণীর মা কুটিরবাসিনী হন এবং কায়িক পরিশ্রমে কোনোরকমে তাদের দিন কাটে।

5. সুতরাং আর আহার চলে না।” –এই না চলার কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?

উত্তর: রাধারাণীর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়, ফলে আহার আর চলে না।

6. রাধারাণী মায়ের পথ্যের জন্য কী করেছিল?

উত্তর: মায়ের পথ্য সংগ্রহের জন্য রাধারাণী বনফুল তুলে মালা গেঁথে রথের হাটে বিক্রি করার পরিকল্পনা করে।

7. “মালা কেহ কিনিল না”। মালা না কেনার কারণ কী ছিল ?

উত্তর: রথের টান অর্ধেক হতে না হতেই প্রবল বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে গেলে মালা কেনার লোক থাকে না। 

8. “তদপেক্ষাও রাধারাণীর চক্ষু বারিবর্ষণ করিতেছিল।” কী সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: শ্রাবণের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তুলনা করে রাধারাণীর চোখের জল ঝরার কথা বলা হয়েছে।

9. এক্ষণে উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিল।”—কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: অন্ধকারে, বাড়ি ফেরার সময় কোনো একজন রাধারাণীর ঘাড়ের উপরে পড়ায় রাধারাণী উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠে।

10 . কিন্তু কণ্ঠস্বর শুনিয়া রাধারাণীর রোদন বন্ধ হইল।” কেন এমন হয়েছিল?

উত্তর: রাধারাণী সেই অপরিচিত কণ্ঠস্বরের মধ্যে একজন দয়ালু মানুষকে আবিষ্কার করেছিল বলে তার কান্না বন্ধ হয়েছিল।

11. রাধারাণী রোদন বন্ধ করিয়া বলিল...”—রাধারাণী কী বলেছিল?

উত্তর:। রাধারাণী কান্না বন্ধ করে বলেছিল সে দুঃখী লোকের মেয়ে এবং তার মা ছাড়া কেউই নেই। 

12. তুমি আমার হাত ধরে।”—এ কথা বলার কারণ কী?

উত্তর:) বক্তা এ কথা বলেছিল কারণ, হাত না ধরলে পিছল পথে রাধারাণীর পড়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল।

13. “রাধারাণী বড়ো বালিকা।”—কীভাবে এই ধারণা হয়েছিল?

উত্তর:। পথিক প্রথমে রাধারাণীর গলার স্বরে এবং পরে তার হাতের স্পর্শে বুঝতে পারেন রাধারাণী নিতান্ত বালিকা ।

14. পথিক চরিত্রটি মালার সন্ধান করছিল কেন? 

উত্তর: পথিক চরিত্রটি তাঁর গৃহদেবতাকে পরানোর জন্য মালার সন্ধান করছিল। 

15. পথিক চরিত্রটি তার মালা কিনতে না পারার পক্ষে কী যুক্তি দিয়েছিল?

উত্তর: পথিক চরিত্রটি বলেছিল যে রথের হার্ট তাড়াতাড়ি ভেঙে যাওয়ায় সে মালা কিনতে পারেনি। 

16. এ যে বড়ো বড়ো ঠেকচে।”—কীসের সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? 

উত্তর: রাধারাণীকে মালার দাম হিসেবে পথিক চার পয়সা দিলে তা অন্ধকারে তার কাছে অনেক বড়ো মনে হয়। 

17. তুমি ভুলে টাকা দাও নাই তো?”—কেন বা এ কথা বলেছে?'

উত্তর: মালার দাম হিসেবে দেওয়া পয়সার আকৃতি এবং অন্ধকারেও তার ঔজ্জ্বল্য দেখে বক্তা রাধারাণী প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করে।

18. “...তাই চকচক করছে।”— বক্তা এই চকচক করার কী কারণ বলেছিল?

উত্তর: বক্তা পথিক চরিত্রটি বলেছিল যে নতুন কলের পয়সা হওয়ায় মুদ্রা দুটি চকচক করছে।

19 '...তখন ফিরাইয়া দিব।”- কখন ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: ঘরের আলোয় ভালোভাবে দেখে পথিকের দেওয়া মুদ্রাটি টাকা হলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। “তারপর প্রদীপ জ্বালিয়ো।” – “তারপর' বলতে বক্তা

20. কীসের পর প্রদীপ জ্বালাতে বলেছেন? 

উত্তর: এখানে বক্তা 'তারপর' বলতে ঘরে গিয়ে রাধারাণীর ভেজা কাপড় ছাড়ার পর বুঝিয়েছেন।

21. আমি ভিজা কাপড়ে সর্বদা থাকি।”— কেন বক্তা সর্বদা ভিজে কাপড়ে থাকে ? 

উত্তর: বক্তা রাধারাণী ভিজে কাপড়ে সর্বদা থাকে কারণ তার মাত্র দুটি কাপড় ছিল।

22. আমার ব্যামো হয় না।”— কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: মাত্র দুটি কাপড় থাকায় রাধারাণীকে সর্বদা ভিজে কাপড়ে থাকতে হয়। এই প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে।

23.আগুন জ্বালিতে কাজে কাজেই একটু বিলম্ব হইল। ---- এই বিলম্ব হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: ঘরে তেল না থাকায় চালের খড় পেড়ে চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালাতে গিয়ে রাধারাণীর বিলম্ব হয়।

24. তখন রাধারাণী বাহিরে আসিয়া তল্লাশ করিয়া দেখিল যে... - রাধারাণী কী দেখেছিল?

উত্তর: রাধারাণী দেখেছিল যে তাকে যে ব্যক্তি টাকা দিয়েছিলেন তিনি আর দরজার বাইরে নেই, চলে গেছেন। 


নবম শ্রেণী রাধারানী গল্প | রাধারানী গল্পের মধ্যম মানের প্রশ্নোত্তর | সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | রাধারানী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২ |রাধারানী গল্পের সাজেশন ২০২২ 


প্রশ্ন : কিন্তু আর আহারের সংস্থান রহিল না।”— এই সংস্থান না থাকার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: একজন জ্ঞাতির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে মামলায় রাধারাণীর বিধবা মা হাইকোর্টে হেরে যায়। জ্ঞাতি ডিক্রি জারি করে তাদের পিতৃপুরুষের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তির দখল নেয়। খরচ এবং পাওনা শোধ করতে বাকি সব অর্থ চলে যায়। গয়না ইত্যাদি বিক্রি করে রাধারাণীর মা প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করলেও খাবার জোগাড়ের অবস্থা তাদের আর থাকে না।


প্রশ্ন : রাধারাণীর বিবাহ দিতে পারিল না। রাধারাণীর বিবাহ দিতে না পারার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: সম্পত্তির অধিকার নিয়ে এক জ্ঞাতির সঙ্গে মামলায় হেরে যাওয়ায় রাধারাণীর বিধবা মা-এর প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি হাতছাড়া হয়। নগদ অর্থ যেটুকু ছিল তা ব্যয় হয়ে যায় পাওনা শোধ ইত্যাদিতে। গয়নাগাটি বিক্রি করে রাধারাণীর মা প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করায় তারা আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়। এই দারিদ্র্যের কারণেই দৈহিক পরিশ্রম করে দিন গুজরান করা রাধারাণীর মা-র পক্ষে রাধারাণীর বিবাহ দেওয়া সম্ভব হয়নি।


প্রশ্ন :  ...তাহাতেই মার পথ্য হইবে।”—এই ভাবনাসূত্রটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় সর্বস্ব হারিয়ে রাধারাণীর বিধবা মা একটি কুটিরে বসবাস করতে শুরু করেন এবং শারীরিক শ্রমের দ্বারা দিন অতিবাহন করতে থাকেন। কিন্তু গভীর অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি পরিশ্রমের ক্ষমতা হারান। রথের দিনে মায়ের শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে তাঁর জন্য পথ্যের প্রয়োজন হয়। রাধারাণী বন থেকে কিছু ফুল তুলে এনে একটি মালা গেঁথে ভাবে রথের হাটে সেটি বিক্রি করেই মায়ের পথ্য জোগাড় করবে।


প্রশ্ন : অগত্যা রাধারাণী কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরিল।”— রাধারাণীর কেঁদে কেঁদে ফেরার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: রাধারাণী বুনোফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় গিয়েছিল, তা বিক্রি করে মা-র পথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু রথ অর্ধেক টানা হওয়ার পরেই প্রবল বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যায়। রাধারাণী তবুও মেলা আবার জমবে এবং তার মালাও বিক্রি হবে এই আশায় বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। কিন্তু রাত হওয়ার পরেও বৃষ্টি না থামায় তার আশাভঙ্গ হয়। মালা বিক্রি না হওয়ায় রাধারাণী অন্ধকারে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরল। 


প্রশ্ন : সেই এক পয়সার বনফুলের মালার সকল কথাই বাহির করিয়া লইল। ” — মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: প্রবল বৃষ্টিতে রথের মেলা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় মালা বিক্রি না হওয়ায় মনের কষ্টে রাধারাণী বাড়ির পথ ধরলে এক পথিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পথিক রাধারাণীকে পিছল পথে হাত ধরে বাড়ি পৌঁছোতেও সাহায্য করে। কিন্তু এই যাত্রাপথে পথিক রাধারাণীর পরিচয়, অল্পবয়সি রাধারাণীর একলা রথ দেখতে যাওয়া, তার কান্নার কারণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করে ‘এক পয়সার বনফুলের মালা' সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্যই জেনে নেয়।


প্রশ্ন : তুমি দাঁড়াও, আমি আলো জ্বালি”।—এই আলো জ্বালার কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: প্রবল বৃষ্টিতে রথের মেলা ভেঙে যাওয়ায় মালা বিক্রিতে ব্যর্থ রাধারাণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। অন্ধকার পথে এক পথিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে রাধারাণীর মালাটি চার পয়সা দিয়ে কিনে নেয়। কিন্তু রাধারাণীর সন্দেহ হয় যে তাকে দেওয়া মুদ্রাগুলি বড়ো এবং চকচক করছে। পথিক ‘ডবল পয়সা’, 'নূতন কলের পয়সা' ইত্যাদি বললেও নির্লোভ রাধারাণী বাড়িতে গিয়ে তা আলোয় পরীক্ষা করে নেওয়ার কথা জানায়।


প্রশ্ন : আমরাও ভিখারি হইয়াছি, দান গ্রহণ করিয়া খরচ | করি।”—বক্তার এই মন্তব্যের পটভূমি উল্লেখ করো ।

উত্তর: রাধারাণী পথিককে চার পয়সার বিনিময়ে বনফুলের মালা বিক্রি করেছিল। কিন্তু তাদের আর্থিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরে পথিক রাধারাণীর অজান্তেই তাকে পয়সার বদলে টাকা দেয় এবং রাধারাণী এ কথা টের পাওয়ার আগেই স্থান ত্যাগ করে। তখনই রাধারাণীর মা পথিকের এই দানের কথা বুঝতে পারেন এবং নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে দানের টাকায় দিনাতিপাত করার কথা বলেছেন।


নবম শ্রেণী রাধারানী গল্প | রাধারানী গল্পের রচনাধর্মী প্রস প্রশ্নোত্তর| বড় প্রশ্নোত্তর | রাধারানী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২ |রাধারানী গল্পের সাজেশন ২০২২ 


প্রশ্ন : পদ্মলোচন—সে বাস্তবিক পোড়ারমুখো কিনা, তাহা আমরা সবিশেষ জানি না” মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর: ‘রাধারাণী' গল্পাংশে রাধারাণীর মা পদ্মলোচনকে পোড়ারমুখো, কাপুড়ে মিসে' বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি পদ্মলোচনের কাপড়ের ব্যাবসা সংক্রান্ত অসাধুতার নিরিখেই এ কথা বলেছেন। কারণ পদ্মলোচন বহুদিন আগে থেকেই রাধারাণীর বাবার কাছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে কাপড় বিক্রি করত। কিন্তু লেখকের মতে কাহিনির এই পর্যায়ে পদ্মলোচনের যেটুকু পরিচয় পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে তাকে ‘পোড়ারমুখো’ বলে চিহ্নিত করা যায় কি না সন্দেহ আছে।


প্রশ্ন : রাধারাণী নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল।”—রাধারাণীর মাহেশে রথ দেখতে যাওয়ার কারণ কী ছিল ? সেখানে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল ? 

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর 'রাধারাণী' গল্পাংশের প্রধান চরিত্র রাধারাণী ছিল এগারো বছরেরও কমবয়সি এক বালিকা। তার পারিবারিক অবস্থা আগে ভালো থাকলেও বর্তমানে তাকে প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। এক জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় রাধারাণীর বিধবা মা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। তাঁর বিপুল সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পরে একটা কুটিরে আশ্রয় নিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করে তিনি পেটের ভাত জোগাড় করতেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাধারাণীদের দিন চলা দায় হয়। রাধারাণীকে উপবাস করতে হয়। কিন্তু রথের দিন তার মায়ের অসুখ বেড়ে গেলে মায়ের জন্য পথ্যের প্রয়োজন হয়। এই পথ্য জোগাড়ের জন্য রাধারাণী বন থেকে ফুল তুলে এনে একটি মালা গাঁথে। মালাটি বিক্রি করে মায়ের পথ্য জোগাড় করার জন্যই রাধারাণী মাহেশে রথের মেলায় যায়।

■ প্রবল বৃষ্টির কারণে রথের মেলা জমে না। মেলা অসময়ে ভেঙে যাওয়ায় রাধারাণীর মালাও বিক্রি হয় না। বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করেও কোনো লাভ না হওয়ায় রাধারাণী যখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছে তখনই তার ঘাড়ের উপরে অন্ধকার পথে একটি লোক এসে পড়ে। সে রাধারাণীর কান্নার কারণ জানতে চায়। তার কণ্ঠস্বরেই তার দয়ালু স্বভাব উপলব্ধি করে রাধারাণী। এরপরে রাধারাণীর হাত ধরে সেই অন্ধকার পিছল পথে সে তাকে বাড়ি পৌঁছোতে সাহায্য করে এবং তার রথের মেলায় যাওয়ার কারণ শুনে মালাটি কিনে নেয়। 


প্রশ্ন : তুমি ঘরে আসিয়া দাঁড়াও, আমরা আলো জ্বালিয়া দেখি, টাকা কী পয়সা।”বক্তা কখন এই মন্তব্য করেছে? আলো জ্বালার পরের ঘটনা উল্লেখ করো।

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী' গল্পাংশে রাধারাণীর কাছে তার ফুলের মালার যাবতীয় কথা শুনে সঙ্গী ভদ্রলোকটি সদয় হন এবং বাড়ির ঠাকুরকে পরানোর জন্য মালাটি কিনে নিতে চায়। রাধারাণী দ্বিধা সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত মালাটি বিক্রি করে। পথিক ভদ্রলোকটি মালার দাম হিসাবে চার পয়সা দেয়। সেই পয়সা হাতে নিয়ে রাধারাণীর বেশ বড়ো লাগে, টাকা বলে মনে হয়। কিন্তু পথিক ‘ডবল পয়সা’ বলে রাধারাণীকে আশ্বস্ত করে। রাধারাণী অন্ধকারেও মুদ্রার চকচক করার কথা বললে পথিক তাকে জানায় সেগুলি ‘নূতন কলের পয়সা’। কিন্তু রাধারাণী এতে সম্পূর্ণ ভরসা করতে পারে না। তাই সে নিজের কুটিরের দরজায় উপস্থিত হয়ে পথিককে অপেক্ষা করতে বলে। উদ্দেশ্য ছিল, প্রদীপের আলো জ্বেলে মুদ্রাগুলি পরীক্ষা করা।

ঘরে তেল না থাকায় রাধারাণী চালের খড় টেনে তাতে চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালায় এবং দেখে যে তার অনুমানই যথার্থ। মালার মূল্য হিসাবে তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, পয়সা নয়। রাধারাণী আগেই জানিয়েছিল যে, ঘরে গিয়ে পয়সার বদলে টাকা দেখলে তা সে পথিককে ফিরিয়ে দেবে। তাই বাইরে এসে পথিকের খোঁজ করে। কিন্তু দেখে যে, সেই ব্যক্তি চলে গিয়েছে। রাধারাণী মায়ের কাছে তার করণীয় জানতে চাইলে তার মা বলেন যে দাতা ব্যক্তি তাদের দুঃখ শুনে দান করেছে, তারা তাই সেটা গ্রহণ করবে।


প্রশ্ন : আমরাও ভিখারি হইয়াছি, দান গ্রহণ করিয়া খরচ করি।”— বক্তার এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট গল্পাংশ অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী” গল্পাংশে রাধারাণীর মা এই উক্তিটি করেছেন। রাধারাণীর পরিবার একদা খুবই সম্পন্ন ছিল। কিন্তু রাধারাণীর বাবার মৃত্যুর পরে তার মা এক জ্ঞাতির সঙ্গে সম্পত্তি সম্পর্কিত বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। হাইকোর্টে হেরে যাওয়ায় তাদের বিপুল সম্পত্তি বেহাত হয়। হ্রচ ও ওয়াশিলাভ দিতে বেরিয়ে যায় নগদ যাবতীয় অর্থ। আর প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করতে বিক্রি করে দিতে হয় যাবতীয় গয়নাগাটি। ফলে রাধারাণী এবং তার মা সীমাহীন দারিদ্রের মুখোমুখি হয়। রাধারাণীর মা একটা কুটিরে আশ্রয় নিয়ে শারীরিক পরিশ্রমের দ্বারা দিন কাটাতে থাকে। মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অবস্থা আরও খারাপ হয়। উপবাসে দিন কাটানো শুরু হয়। এই জীবনকেই রাধারাণীর মা 'ভিখারি জীবন' বলেছেন।

অসুস্থ মায়ের পথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাধারাণী বনফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করতে যায়। কিন্তু বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় তার মালা বিক্রি হয় না। ফেরার পথে এক পথিক সব শুনে চার পয়সায় মালাটি কিনে নেয়। কিন্তু অন্ধকারে রাধারাণীর মনে হয় তাকে পয়সার বদলে টাকা দেওয়া হয়েছে। তাই বাড়ি ফিরে পথিককে বাইরে দাঁড়াতে বলে সে আগুন জ্বালিয়ে মুদ্রাটি দেখে নিতে চায়। যখন সে দেখে টাকাই দেওয়া হয়েছে, তখন বাইরে বেরিয়ে সে পথিককে খুঁজে পায় না। বিভ্রান্ত হয়ে রাধারাণী তার মায়ের কাছে পরামর্শ চাইলে মা বলেন যে দাতা অর্থ দিয়েছেন এবং দরিদ্র বলেই তাদের তা গ্রহণ করে খরচ করা ছাড়া উপায় নেই। 


প্রশ্ন : রাধারাণী' গল্পাংশে রাধারাণীর চরিত্রকে যেভাবে পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’ গল্পাংশের নামকরণই কাহিনিতে তার গুরুত্বকে বুঝিয়ে দেয়। পিতৃহীন রাধারাণীর বয়স এগারো পূর্ণ হয়নি। একসময় তারা অবস্থাপন্ন হলেও মোকদ্দমায় সর্বস্বান্ত হওয়ার পরে তারা অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় দিন কাটায়।

দায়িত্ববোধ : বয়সের তুলনায় রাধারাণী ছিল অত্যন্ত দায়িত্ব বোধসম্পন্ন। তাই অসুস্থ মায়ের পথ্যের অর্থ সংগ্রহের জন্য মালা গেঁথে একা-একাই সেই মালা রথের মেলায় বিক্রি করতে যায় ।

মাতৃভক্তি : মায়ের পথ্যের জন্য মালা বেচতে যাওয়া শুধুমাত্র রাধারাণীর দায়িত্ববোধেরই নয়, তার মাতৃভক্তিরও পরিচয়। দ্বিধা সত্ত্বেও মায়ের কথাতেই সে রুক্মিণীকুমারের কাছে মালা বিক্রি করে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থগ্রহণে রাজি হয়।

নীতিবোধ : অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করতে রাধারাণীর এই যে দ্বিধা, এ থেকেই তার নৈতিকতাবোধ সম্পর্কেও আমরা ধারণা করতে পারি। এর কারণেই রুক্মিণীকুমারের রেখে যাওয়া নোটটিও সে ভাঙায় না।

কৃতজ্ঞতাবোধ : অন্ধকারে হাত ধরে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসা সেই উপকারী মানুষটির কাছ থেকে মালার দাম নেওয়া উচিত হবে কি না তা নিয়ে রাধারাণীর যে সংশয় তা তার কৃতজ্ঞতা বোধেরই পরিচয়।

সেবাপরায়ণতা: বাজারে যাওয়া, তেল আনা, রান্না করা, মাকে খেতে দেওয়া, ঘর পরিষ্কার করা এইসব কাজকর্ম থেকে বোঝা যায় ঘরের কাজে এবং সেবাযত্নেও সে যথেষ্ট পারদর্শী ছিল। 

সততা : আলোচনার শেষে রাধারাণীর যে গুণটির কথা না বললেই নয়, তা হল তার সততা। অভাবের মধ্যে থেকেও রুক্মিণীকুমারের ফেলে যাওয়া নোটটি কিন্তু সে ভাঙায় না, বরং রেখে দেয় কখনও তার দেখা পেলে সেটি ফেরত দেবে বলে। এভাবেই দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও নিজ চরিত্রগুণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রাধারাণী।


প্রশ্ন : রাধারাণী' গল্পাংশের পথিক চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের 'রাধারাণী' গল্পাংশে পথিক চরিত্রটির আবির্ভাব কিছুটা নাটকীয়। গল্পের শেষে জানা যায়, তার নাম রুক্মিণীকুমার। বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে যাওয়া রথের মেলা থেকে ফেরার পথে রাধারাণীর সঙ্গে তার আলাপ। তার কণ্ঠস্বরে ভয়ার্ত রাধারাণী আশ্বস্ত হয়। তার চরিত্রের যে গুণগুলি আমাদের চোখে পড়ে সেগুলি হল—

দয়ালু: বৃষ্টি-ভেজা, অন্ধকার, পিছল পথে রাধারাণীকে হাত ধরে বাড়ি পৌঁছে দেয় পথিকটি। কথায় কথায় জেনে নেয় তার দুঃখের কাহিনি। এ থেকে তার দয়া আর সহানুভূতিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায় ।

পরোপকারী : রাধারাণীর প্রয়োজন ও তার বিক্রি না হওয়া মালার কথা শুনে পথিক সেই মালা কিনে নেয়। শুধু তাই নয়, অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে পয়সার বদলে তাকে টাকা দেয়। আবার, রাধারাণীকে টাকা ফেরত দেবার সুযোগ না দিয়েই নিঃশব্দে ফিরে যায়। রাধারাণীর পরার আর কাপড় নেই শুনে পদ্মলোচন সাহার দোকানে কাপড়ের দাম দিয়ে, সেই কাপড় রাধারাণীকে পৌঁছে দেবার নির্দেশও দিয়ে যায় সেই পথিক। এসবই তার পরোপকারী, উদারমনা স্বভাবকে স্পষ্ট করে।

আত্মপ্রচারবিমুখ : রুক্মিণীকুমার নামে সেই পথিক রাধারাণীর এত উপকার করলেও কখনোই তাকে তা সরাসরি জানতে দেয়নি। এমনকি রাধারাণীদের আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পেরে সবার অজান্তেই তার ঘরে নোটখানি রেখে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, আত্মপ্রচারের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। 

বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন: আত্মপ্রচারবিমুখ হলেও রুক্মিণীকুমার ছিল বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন। তাই সবার অলক্ষ্যে রাধারাণীর ঘরে ফেলে যাওয়া নোটটিকে কেউ যাতে চোরা নোট বলতে না পারে, সেজন্য তাতে দাতা ও প্রাপকের নামটি লিখে রেখে যেতে ভোলেনি। এইভাবে বিবিধ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে পথিক চরিত্রটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।


প্রশ্ন : রাধারানী গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো 

উত্তর : রাধারাণী নামের এক পিতৃহীনা বালিকা মায়ের পথ্যের অর্থ সংগ্রহের জন্য বন থেকে ফুল তুলে একটি মালা গাঁথে এবং রথের মেলায় যায় সেটি বিক্রির জন্য। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে তার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। কাঁদতে কাঁদতে সে যখন বাড়ির পথ ধরেছে— রাত্রির অন্ধকারে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে এক পথিকের। পথিকটি সব শুনে রাধারাণীর মালাটি কিনে নেয়। শুধু তাই নয়, মালার দাম চার পয়সা হলেও তার বদলে সে রাধারাণীকে টাকা দেয়। যাওয়ার সময়ে কাপড় ব্যবসায়ী। পদ্মলোচনের দোকানে রাধারাণীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাপড়ের দামও দিয়ে যায় সেই পথিক এবং সকলের অলক্ষ্যে রাধারাণীর বাড়িতে একটা নোট রেখে যায়। এই যাবতীয় ঘটনা ও কাজকর্মের মাঝখানে ছিল রাধারাণী। তার নির্লোভ, সৎ, নীতিপরায়ণ চরিত্রকে তুলে ধরাই ছিল গল্পকারের লক্ষ্য। গল্পে যাবতীয় ঘটনা তাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণের রীতি অনুসরণ করে গল্পাংশের নাম রাধারাণী রাখা অত্যন্ত সংগত হয়েছে। 

প্রশ্ন : রাধারানী গল্পের বিষয় সংক্ষেপ আলোচনা করো 

উত্তর : রাধারাণী এক গরিব বিধবা মায়ের মেয়ে। একদা অবস্থাপন্ন হলেও জ্ঞাতির সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমায় হেরে যাওয়ায় তার মা নিঃস্ব হয়ে যান। কুটিরবাসী হয়ে দৈহিক পরিশ্রম করে কোনোরকমে তাঁর দিন চলত। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাও সম্ভব হত না। মা-মেয়ের উপবাস চলতে লাগল। এই সময়ে মায়ের পথ্যের চিন্তায় অধীর হয়ে রাধারাণী বন থেকে ফুল তুলে মালা গাঁথল। উদ্দেশ্য, রথের হাটে তা বিক্রি করে মায়ের পথ্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ। কিন্তু বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে গেল। রাধারাণী অনেক অপেক্ষা করার পরও বৃষ্টি থামল না,মেলাও জমল না। অন্ধকার পথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাধারাণী যখন বাড়ি ফিরছিল তখন তার চোখ থেকেও বৃষ্টির মতোই জল গড়িয়ে পড়ছিল। এই সময়ে হঠাৎই এক পথিক তার ঘাড়ের উপরে এসে পড়ে এবং তার কান্নার কারণ জানতে চায়। প্রশ্নের মধ্য দিয়ে রাধারাণীর অবস্থা, বাসস্থান ইত্যাদি জেনে নিয়ে সেই পথিক পিছল পথে হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে। রাধারাণীর গাঁথা মালাটিও সে বাড়ির ঠাকুরকে পরানোর জন্য কিনে নেয়। কিন্তু দাম হিসেবে পয়সা নিয়েই রাধারাণীর সন্দেহ হয় যে তাকে পয়সার বদলে টাকা দেওয়া হয়েছে কি না। সে বাড়িতে ফিরে তা প্রদীপ জ্বালিয়ে যাচাই না করা পর্যন্ত পথিককে দাঁড়াতে বলে। আগুন জ্বালিয়ে সে দেখে যে তার অনুমান সত্য। তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। অথচ বাইরে এসে রাধারাণী দেখে টাকা দিয়েছে যে পথিক সে চলে গিয়েছে। এরইমধ্যে কাপড়ের দোকানের মালিক পদ্মলোচন সাহা একজোড়া শান্তিপুরি শাড়ি রাধারাণীর জন্য এনে বলে যে এক বাবু দাম মিটিয়ে দিয়ে তাকে এই শাড়ি দিয়ে যাওয়ার কথা বলে গেছেন। সকলেই বিস্মিত হল তার পরিচয় নিয়ে। রাধারাণী সেই টাকা ভাঙিয়ে বাজার করে আনল, মা-র জন্য সামান্য কিছু রান্না করল। এরপর মাকে ভাত বেড়ে দেওয়ার জন্য যখন ঘর ঝাঁট দিচ্ছে তখন সে একটি নোট কুড়িয়ে পেল। তাতে রাধারাণীর নাম লেখা আছে। দাতার নামও লেখা আছে—রুক্মিণীকুমার রায়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তার সন্ধান তারা পেল না। রাধারাণীরা নোটটি না ভাঙিয়ে তুলে রাখল, কারণ তারা দরিদ্র হলেও লোভী নয়।


Tags

Post a Comment

0 Comments