Type Here to Get Search Results !

নব নব সৃষ্টি কবিতা (সৈয়দ মুজতবা আলী) গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২ | Nobo Nobo sristi kobita suggestion 2022


              নব নব সৃষ্টি কবিতা 

               সৈয়দ মুজতবা আলী


নব নব সৃষ্টি কবিতা (সৈয়দ মুজতবা আলী) | নব নব সৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২ | mcq প্রশ্ন উত্তর | বহুবিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর | নব নব সৃষ্টি কবিতা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২


1. নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশটির রচয়িতা হলেন—

A) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

B) সৈয়দ মুজতবা আলী 

D) বেগম রোকেয়া

C) বুদ্ধদেব গুহ

2. সৈয়দ মুজতবা আলীর ছদ্মনাম

A) ভানুসিংহ

B) ওমর খৈয়াম

C) অনিলা দেবী

D) মৌমাছি

3. নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত যে মূল প্রবন্ধের অংশবিশেষ, সেটি হল

A) বেজো না চরণে চরণে 

B) ফরাসী-বাংলা

C) পুষ্পধনু

D) মামদোর পুনর্জন্ম

4. নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধটি সৈয়দ মুজতবা আলীর যে গ্রন্থ থেকে সংকলিত তার নাম—

A) পঞ্চতন্ত্র (প্রথম পর্ব)

B) পঞ্চতন্ত্র (দ্বিতীয় পর্ব)

C) ময়ূরকণ্ঠী

D) চতুরঙ্গ

5. চতুরঙ্গ' গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

A) ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে

B) ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে

C) ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে

D) ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে

6. নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে যে ভাষাকে লেখক বলেছেন আত্মনির্ভরশীল

A) হিন্দি

B) বাংলা

C) ইংরেজি 

D) সংস্কৃত

7. সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল”। – লেখক সংস্কৃতকে আত্মনির্ভরশীল বলেছেন, কারণ

A) সংস্কৃত কখনও বিদেশি শব্দ গ্রহণ করেনি

B) সংস্কৃত এখন আর কোনো বিদেশি শব্দ গ্রহণ করে না

C) কোনো নতুন চিন্তা অনুভূতি বা বস্তুর জন্য নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত নিজের মধ্যেই তার অনুসন্ধান করে

D)  সংস্কৃত হল অন্যতম প্রাচীন একটি ভাষা

8. প্রাচীন যুগের ভাষা নয় ___ 

A. হিব্রু 

B. গ্রীক 

C. আবেস্তা 

D. এসপারেনতো


নব নব সৃষ্টি কবিতা (সৈয়দ মুজতবা আলী) | নব নব সৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২ | অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | নব নব সৃষ্টি কবিতা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২


 1. নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন 'আত্মনির্ভরশীল’?

উত্তর: ‘নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে প্রাচীন যুগের হিব্রু,গ্রিক, আবেস্তা, সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাকে ‘আত্মনির্ভরশীল’ বলেছেন।

2. কোনো নতুন চিন্তা বা অনুভূতি বোঝানোর জন্য নবীন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা কী করে? 

উত্তরঃ সংস্কৃত তার আপন ভাণ্ডারেই কোনো ধাতু বা শব্দের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।

3. সংস্কৃতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা বলতে লেখকের আপত্তি নেই কেন ?

উত্তর : সংস্কৃত অন্য ভাষার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ভাণ্ডারে অনুসন্ধানের মাধ্যমে নবীন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।

4. প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই।” প্রাচীন যুগের কোন্ কোন্ ভাষার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: লেখক প্রাচীন যুগের সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা পরবর্তী যুগের আরবি ভাষার কথা লেখক বলেছেন।

5. লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের কোন্ কোন্ ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়?

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়। 

6. পাঠান-মোগল যুগে আরবি ও ফারসি থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হল কেন ?

উত্তর: পাঠান-মোগল যুগে আইন-আদালত, খাজনা-খারিজ নতুন রূপে দেখা দেওয়ায় আরবি-ফারসি থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।

7. নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কোন্ প্রশ্নকে অবান্তর বলেছেন?

উত্তর: ভাষায় বিদেশি শব্দগ্রহণ ভালো না মন্দ—এই প্রশ্নকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী অবান্তর বলেছেন।

8. সে সম্বন্ধে কারও কোনো সন্দেহ নেই।”— কোন্ বিষয়ে সন্দেহ নেই?

উত্তর: শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজির বদলে বাংলা গ্রহণ করলে প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ করবে।

9. নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে লেখক রান্নাঘর থেকে কী কী তাড়ানো মুশকিল বলেছেন ?

উত্তর: নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে রান্নাঘর থেকে আলু-কপি তাড়ানো মুশকিল বলেছেন লেখক। 

10. নতুন আমদানিও বন্ধ করা যাবে না।”— কোন্ প্রসে লেখক এরূপ বলেছেন ?

উত্তর: বিদেশি দ্রব্যের ব্যবহারের মতো বিদেশি ভাষাও মাতৃভাষায় থাকবে, এই প্রসঙ্গে একথা বলেছেন লেখক।

11. বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন – লেখক কোন্ ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন?

উত্তর: লেখক হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন।

12. বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন”—বহু সাহিত্যিক কোন কাজে তৎপর হয়েছেন? 

উত্তর: হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ দূর করার জন্য তৎপর হয়েছেন হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা।

13. চেষ্টাটার ফল আমি হয়তো দেখে যেতে পারবো না — কোন্ চেষ্টার কথা বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি বা ইংরেজির মতো ভাষা দূর করার চেষ্টার কথা বোঝানো হয়েছে।

14. 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে কয়েকজন বাঙালি সাহিত্যিক ও পণ্ডিতব্যক্তির নাম এসেছে। তারা কারা?

উত্তর: আলোচ্য রচনাংশে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্কিমচন্দ্র, আলাল (প্যারীচাদ) ও হুতোম (কালীপ্রসন্ন)-এর নাম পাওয়া যায়।

15. রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন”—রবীন্দ্রনাথের কী লেখার কথা বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?

উত্তর: বাংলা ভাষায় আরবি-ফারাসি শব্দ খুব স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, 'আব্বু দিয়ে, ইজ্জত্ দিয়ে প্রভৃতি।

16. নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার কী কী উদাহরণ দিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?

উত্তর: নজরুল ইসলাম ইনক্লাব' এবং 'শহিদ' প্রভৃতি আরবি ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেছেন।

17. নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে ব্যবহৃত 'আলাল' ও 'হুতোম' কাদের লেখা, কী কী গ্রন্থ?

উত্তর: 'আলাল হল আলালের ঘরের দুলাল, লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। 'হুতোম হল হুতোম প্যাঁচার নক্‌শা, লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ।

18. হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম কাকে বলা হয় ?

উত্তর: হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম বলা হয় সাহিত্যিক মুন্সী প্রেমচাদকে। 

19.এ স্থলে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো।”— কী কথা বলেছেন লেখক ?

উত্তর : রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে, একথা বলেছেন লেখক।

20. শংকরদর্শন আলোচনায় কোন্ ভাষার ব্যবহার স্বাভাবিক হবে?

উত্তর: শংকরদর্শনের আলোচনার ভাষায় সংস্কৃতের আধিক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।

21. কোন পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?

 উত্তর: 'বসুমতী' পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় -গাম্ভীর্য আছে।

22. বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষা প্রধান বলেছেন লেখক ?

উত্তর: বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরাজি অন্যতম।

23. বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশের কারণ কী বলেছেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী?

উত্তর: প্রাচীন যুগ থেকেই বাংলা দেশে সংস্কৃত ভাষার চর্চা ছিল। ফলে বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।

24. যতদিন থাকবে ততদিন আরও ঢুকবে বলে আশা করতে পারি।”—যতদিন কী থাকার কথা বলেছেন লেখক? 

উত্তরঃ বাংলা দেশে যতদিন সংস্কৃত ভাষার চর্চা চলবে ততদিন বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দের প্রবেশও চলতে থাকবে।

25. স্কুল-কলেজ থেকে যে আমরা সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিতে

চাই না তার অন্যতম প্রধান কারণ কী বলেছেন লেখক? উত্তর: বাংলা অনেকাংশেই সংস্কৃত ভাষার ওপর নির্ভরশীল,তাই শিক্ষাক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা বন্ধ হয়নি। 

26. কোন্ বিশেষ বিশেষ বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন ? 

উত্তর: দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যার মতো বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন।

27. এই দুই ভাষা থেকে ব্যাপকভাবে আর নতুন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে না।”— কোন্ 'দুই ভাষা'র কথা এখানে বলা হয়েছে? 

উত্তর: 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে সৈয়দ মুজতবা আলী দুই ভাষা বলতে আরবি এবং ফারসি ভাষার কথা বলেছেন।

28. একমাত্র আরবি-ফারসি শব্দের বেলা অনায়াসে বলা যেতে পারে যে”—লেখক কী বলেছেন?

উত্তর : আরবি এবং ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে প্রবেশ করবে না—এই কথা অনায়াসে বলেছেন লেখক। 



নব নব সৃষ্টি কবিতা (সৈয়দ মুজতবা আলী) | নব নব সৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২ |রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর | বড় প্রশ্ন উত্তর | নব নব সৃষ্টি কবিতা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ২০২২


প্রশ্ন : প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই”।–কোন্ কোন্ ভাষার উল্লেখ করে লেখক কেন এরূপ বলেছেন? এ প্রসঙ্গে বর্তমান যুগের কোন্ দুটি ভাষা সম্পর্কে তিনি কী বলেছেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটি প্রসঙ্গে লেখক হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা আধুনিক আরবি ভাষার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন যুগের অধিকাংশ ভাষাই নতুন চিন্তা-ভাবনা, নতুন বস্তু বোঝাতে নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে তা নিজ ভাণ্ডারের ধাতু বা শব্দ দ্বারাই তৈরি করার চেষ্টা করেছে। বিদেশি শব্দ ব্যবহার করলেও তা যৎসামান্য। তাই লেখক প্রাচীন ভাষাগুলিকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেছেন।

ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রসঙ্গেই লেখক বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার উল্লেখ করেছেন। আধুনিক কালের ভাষা ইংরেজি এবং বাংলা প্রয়োজনের খাতিরে অতিরিক্ত শব্দ অন্যান্য ভাষা থেকে গ্রহণ করে নিজ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার ও প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে। পাঠান-মোগল যুগে এভাবেই বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ স্থানলাভ করেছে ।


প্রশ্ন : বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর।” —মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।

ভাষা তার নিজ শব্দভাণ্ডারের ধাতু বা শব্দ দ্বারা নতুন শব্দ তৈরি করতে পারলেই ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু বিদেশি শব্দ গ্রহণ করলেও ভাষা অনেকসময়ই মধুর এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যদি সেই ভাষা বিষয়কেন্দ্রিক হয়। লেখক নিজেই বলেছেন, “রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।” প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ভাষায় সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি শব্দ অবলীলাক্রমে মিশেছে। শিক্ষার মাধ্যম রূপে ইংরেজি বর্জন করার ফল বাংলা ভাষা পেয়েছে, কারণ বাংলায় তারপরই প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় শব্দ ঢুকেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও নানান দ্রব্য ব্যবহৃত হয় যা বিদেশি বস্তু। অনুরূপভাবে বিদেশি শব্দও প্রবেশ করবে ভাষায়। হিন্দি ভাষাকে আরবি-ফারসি শব্দ মুক্ত করার জন্য চেষ্টা শুরু করেছেন হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা। তার ফলাফল ভালো না খারাপ হবে তা লেখক ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিলেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ আনায়াসেই আরবি-ফারসি ভাষা মিশিয়ে লিখেছেন, “আব্বু দিয়ে ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।” আবার নজরুল ইসলামও ‘ইনকিলাব’, শহিদ’ প্রভৃতি শব্দ বাংলায় ব্যবহার করেছেন। বিষয়ের গাম্ভীর্য, আভিজাত্য এবং চটুলতার ওপর ভাষার ব্যবহার নির্ভর করে। ফলে বিদেশি শব্দের প্রয়োগও ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম যদি তা বিষয়বস্তুর প্রতিফলন ঘটাতে পারে।


প্রশ্ন : ফল যদি ভালো হয় তখন তাঁরা না হয় চেষ্টা করে দেখবেন।”— কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এরূপ বলেছেন? বাংলা | সাহিত্যিকদের নিয়ে এই প্রসঙ্গে লেখক কী বলেছেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী ‘নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে ভাষায় বিদেশি শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকদের একটি প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। হিন্দি ভাষাকে আরবি, ফারসি, ইংরেজি শব্দ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে হিন্দি সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছেন বেশ কিছু হিন্দি সাহিত্যিক। তাঁদের এই চেষ্টার ফল ভালো না খারাপ হবে, তা বিচার করার চেয়ে বড়ো কথা এই যে তাঁরা চেষ্টা শুরু করেছেন।

বাংলা সাহিত্যিকরা অবলীলাক্রমে বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। সাহিত্যের নতুন নতুন সৃষ্টি দিয়ে ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যসম্ভার গড়ে তুলতে ভাষা বিষয়বস্তু কেন্দ্রিক হবে এটাই মূল কথা। তাই রবীন্দ্রনাথ খুব স্বচ্ছন্দেই আরবি-ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে লিখেছেন, “আব্বু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।” নজরুল ইসলামও ইনকিলাব' বা 'শহিদ’ শব্দ সহজেই বাংলা ভাষার মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যাসাগরও তাঁর চলিত ভাষায় লেখা রচনার মধ্যে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার করেছেন। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরবি-ফারসি শব্দের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করাকে মূর্খামি বলে মনে করতেন।


প্রশ্ন : রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।" মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি সৈয়দ মজুতবা আলীর 'নব নব সৃষ্টি' পাঠ্য প্রবন্ধ থেকে নেওয়া। রচনার গাম্ভীর্য, আভিজাত্য, চটুলতার সঙ্গে ভাষার ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। নতুন শব্দ তৈরি বা বিষয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন চিন্তা ও অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে গেলে বিদেশি ভাষার প্রয়োজন। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি বর্জনের ফলে বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ আরও বেশি করেই প্রবেশ করেছে। তবে বিদেশি শব্দ কোনোভাবেই লেখার মাধুর্যকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে না যদি তা বিষয়কেন্দ্রিক হয়। রবীন্দ্রনাথ আরবি ফারসিকে স্বাগত জানিয়ে খুব স্বচ্ছন্দেই লিখেছেন, “আব্রু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে।” নজরুল ইসলামও 'ইনকিলাব', 'শহিদ', প্রভৃতি শব্দ বাংলায় অনায়াসেই ব্যবহার করেছেন। শংকরদর্শনের আলোচনায় যে গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য রয়েছে, তা সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারেই যথার্থরূপ লাভ করে। 'বসুমতী' পত্রিকার সম্পাদকীয় প্রকাশের ভাষাও গম্ভীর ভাব বহন করে। কিন্তু 'বাঁকা চোখে' পত্রিকার ভাষায় চটুলতা তার বিষয় উপযোগী। আবার রেলের ইঞ্জিন কীভাবে চালাতে হয় বা বিজ্ঞানচর্চা ও দর্শনের বিষয় জানতে ইংরাজি ভাষার বিকল্প নেই। সুতরাং ভাষা প্রয়োগের যথার্থতাই বিষয়বস্তুর নির্যাস তুলে ধরতে সক্ষম।


প্রশ্ন : বাংলায় যেসব বিদেশি ভাষার শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক প্রধান বলেছেন ? এই প্রসঙ্গে | সংস্কৃত ও ইংরেজি নিয়ে লেখক কী বলেছেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' রচনাংশে জানিয়েছেন যে বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে সেগুলির মধ্যে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষার শব্দই প্রধান।

একসময়ে ভারতবর্ষে তথা বাংলা দেশে সংস্কৃত ভাষার ব্যাপক চর্চা ছিল। এখনও স্কুল-কলেজে সংস্কৃত চর্চা হয়। ফলে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ভাষার প্রভাব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সংস্কৃত শব্দ বর্তমানেও সামান্য হলেও বাংলা ভাষায় প্রবেশ করছে। সংস্কৃত ভাষাকে বাংলার মাতৃসম ভাষা বলাই হয়, তাই সংস্কৃত চর্চা বন্ধ করে দিলে বাংলা ভাষা এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষার সান্নিধ্য হারাবে। লেখক বলেছেন, “আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবো।

আধুনিক শিক্ষার অগ্রগতিতে দর্শনশাস্ত্র, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা এবং বিজ্ঞানচর্চায় ইংরেজি ভাষার বিকল্প নেই। উদাহরণস্বরূপ লেখক বলেছেন যে রেলের ইঞ্জিন কী করে চালাতে হয়, সে বিষয়ে বাংলায় কোনো বই নেই। ফলে বাঙালিকে ইংরেজি ভাষারই শরণাপন্ন হতে হয়। সুতরাং ইংরাজী চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।


প্রশ্ন : নব নব সৃষ্টি রচনাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর ।

উত্তর : লেখক তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি' রচনায় যে-কোনো সৃষ্টিকর্মের নির্মাণে যে পরীক্ষানিরীক্ষা, গ্রহণ-বর্জন থাকে তাকে দেখার চেষ্টা করেছেন। কিছু ভাষা আছে যেমন সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা, এমনকি আরবি ইত্যাদি প্রাচীন ভাষাগুলি অনেকটাই আত্মনির্ভরশীল। আবার বাংলা, ইংরেজির মতো ভাষাগুলি অন্য ভাষা থেকে শব্দ নেয়। এই শব্দরা স্থায়ীভাবে ভাষায় থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বেনামে বিদ্যাসাগর সকলেই একাজ করেছেন। বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করেই শব্দগ্রহণ চলে। এই গ্রহণের পথে বাংলার সঙ্গে সংস্কৃত ও ইংরেজিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আরবি-ফরাসির প্রভাব কিছুটা ক্ষীণ হয়ে গেছে। যদিও সাহিত্যে ইতিমধ্যে স্থান পেয়ে যাওয়ায় এবং একালে পরীক্ষানিরীক্ষার কারণে এইসব ভাষার শব্দও টিকে থাকবে। এখানে আবার আরবির থেকে ফারসির গ্রহণযোগ্যতা বেশি। উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যে ফারসিরই প্রভাব লক্ষ করা যায়। ইকবালের মতো কেউ কেউ অবশ্য উর্দুকে ফারসির প্রভাব মুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। অন্যভাষার উপরে নির্ভর না করে যে সাহিত্যসৃষ্টি সার্থক হতে পারে তার উদাহরণ পদাবলি কীর্তন। বাঙালি হিন্দুই হোক, অথবা মুসলমান—তারা যে সবকিছুকে মেনে না নিয়েই স্বাধীনভাবে চলতে চায়—এই বিদ্রোহীসত্তা তাদের মধ্যে সদাজাগরুক থাকে। সব মিলিয়েই শব্দ ও ভাষাঋণ নেওয়া বা বর্জন করা এই বিপরীতমুখী দুই স্রোতেই সাহিত্য গড়ে ওঠে। সৃষ্টির সেই বিচিত্র স্বরূপকে ধরার চেষ্টা হয়েছে বলেই প্রবন্ধের নাম ‘নব নব সৃষ্টি’ সার্থক হয়ে উঠেছে।

Tags

Post a Comment

0 Comments